ঢাকা, বাংলাদেশ  |  বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪



  বিভাগ : পরবাস তারিখ : ০৮-০৭-২০২৪  


হিউ ভিয়েতনাম ও হোচিমিনের জন্মস্থান

দ্যা ল্যান্ড অব ড্রাগন্স


  লিয়াকত হোসেন, সুইডেন



লিয়াকত হোসেন: সুইডেন থেকে


হিউ
হিউকে বলা হয় রাজকীয় শহর।
রাজকীয় রাজা বাদশাহরা এই শহরেই বাস করতেন। চীনারা হ্যানয়ের সীমান্ত পার হয়ে হিউতে এসে রাজপ্রসাদ ও নিষিদ্ধ নগরী স্থাপন করে দীর্ঘ একহাজার বছর ভিয়েতনামে আধিপত্য বিস্তার করে শাসন করেছে। ভিয়েতনাম সম্রাটের শেষ সময়কাল পর্যন্ত অর্থাৎ ১৮০২ থেকে ১৯৪৫ পর্যন্ত হিউ ছিল ভিয়েতনামের রাজধানী।


সকাল নয়টার মধ্যেই গাড়ি চলে এল।
আমরা লাগেজ ও বেলিফুলের গাছটিসহ লবিতে নেমে এলাম। হোটেল স্টাফরা বিদায় জানাতে এলেন। তাদের আন্তরিক ব্যবহার ভোলার নয়। হোইআন থেকে হিউ-এর দূরত্ব ১২০ কিলোমিটার। তিন চার ঘণ্টার পথ। আমরা যাবো গাড়িতে। নতুন গাড়ি নতুন ড্রইভার, তার দায়িত্ব আমাদের হিউ-এ নির্ধারিত হোটেলে পৌঁছে দেয়া। প্রশস্ত পথে গাড়ি ছুটে চলেছে। রৌদ্র উজ্জ্বল দিন। ছুটতে ছুটতে সমুদ্রের ধারে গাড়ি এসে থামে। যাত্রা শেষ হয়নি তবে চা-কফির বিরতি। বালির চড়ে ঘাটে বাঁধা নৌকা। গরমের ভেতর ঝির ঝির হাওয়া। সামনে দিগন্ত প্রসারিত সমুদ্র। চড়ের পাশেই জলের ভেতর অনেকটা জায়গা নিয়ে ঝিনুকের চাষ। বোঝা গেল সমুদ্র থেকে মুক্তা তুলে আনার পাশাপাশি মুক্তা চাষের ব্যবস্থা। রাস্তার ওপাশেই হোটেল রেস্টুরেন্টসহ বেশ কয়েকটি মুক্তোর দোকান। হবারই কথা, সামুদ্রিক মুক্তাতো এখানেই পাওয়া যাচ্ছে। গহনার দোকান মেয়েদের তীব্র টানে। সেই টানে রেহানা একটি দোকানে ঢুকে গেল, পেছনে আমি। দোকান সাজিয়ে প্রচুর মুক্তোর গহনা। একটি থেকে আর একটি দৃষ্টি কাড়ে। টুরিস্টরা ডলারেও কেনাকাটা করতে পারেন। দোকান থেকে বেশ কয়েকটি মুক্তোর গহনা কেনা হলো।

দুপুরেই হিউ-এ পৌঁছে গেলাম।
আমাদের নামিয়ে দিয়ে বিদায় নিয়ে ড্রাইভার চলে গেলেন। দু‘ই প্রশস্ত রাস্তার মাঝে বিরাট সুসজ্জিত হোটেল। রাজকীয় শহর বলে হোটেলসহ স্টাফরাও সুসজ্জিত রাজকীয়। হোটেলের ভেতর বিরাট সুইমিং পুল। দোতালায় সুইমিংপুল লাগুয়া একটি প্রশস্ত রুম আমাদের দেয়া হলো। একটু বিশ্রাম নিয়ে দিনের তাপমাত্রা কমে গেলে বের হলাম। সুইমিংপুলের পাশ দিয়ে পথ। স্নানার্থিরা জলে দাপিয়ে জলকেলি করছেন। ডিনারের সময় হয়ে এল। হালকা কিছু খাওয়া দরকার। রাস্তার পাশে সুন্দর সাজানো এক কফি শপে এলাম। স্যান্ডউইচ ও কফি পান করা যেতে পারে। স্যান্ডউইচ পাওয়া গেল না তবে দুটি স্ন্যাক্স পাওয়া গেল। স্টকহোম থেকে যাবার সময় সাড়ে চার মিলিয়ন ডং সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলাম। সাড়ে চার মিলিয়ন ডং পকেটে রাখতেই নিজেকে মিলিয়নিয়র মনে হয়েছিল। কিন্তু ডং-এ অনেক শূন্য হওয়ায় দ্রুতই পকেট শূন্য হয়ে গেল। স্ন্যাস্ক কেনার মত পর্যাপ্ত ডং না থাকায় ডলারে কিনতে চাইলাম। দাম দুই ডলার। কিন্তু দোকানী কিছুতেই ডলার না নেয়ায় আমাদের ফিরতে হলো। ডং-এ দোকানের হিসেব রাখতে হয় বলেই হয়তো ডলার নিতে চায়নি। ফিরে আমাদের হোটেলের নিজস্ব রেস্টুরেন্টে এলাম। সাজানো গুছানো রেস্টুরেন্ট, একপাশে ভ্রমণপিপাসুরা পানীয়সহ ডিনার করছেন। এগিয়ে গিয়ে টেবিলে বসতেই ওয়েটার এগিয়ে এলে জিজ্ঞেস করতেই জানালেন ডলারে পে করা যাবে। খাবার শেষে বিল এলো উনিশ ডলার। সঙ্গে কার্ড থাকলেও কার্ড এড়িয়ে চলছিলান কারণ প্রতিবারেই কার্ড পেমেন্টে পাঁচ থেকে ছয় পার্সেন্ট অতিরিক্ত পে করতে হবে। এই হোটেলের আলাদা একটি বৈশিষ্ট্য আছে। হোটেলের দুইতলার কর্নারে মাঝারি আকারের সুসজ্জিত লাইব্রেরি। অন্য কোনো হোটেলে এই ব্যবস্থা দেখিনি। রিসেপশনের পাশ দিয়ে দোতলায় উঠে এলাম। লাইব্রেরি রুমে চেয়ার টেবিল ও ডিভান পাতা। চেয়ার ছাড়া ডিভানেও শুয়ে পড়া যায়। ভিয়েতনামের উপর অনেক বই, অনেক ম্যাগাজিন তবে কোনোটাই ইংরেজি ভাষায় নয়, সবই ভিয়েতনামী ভাষায়। ঐ ভাষাটা না জানা থাকায় পাতা উল্টিয়েই কাটিয়ে দিলাম।

ভোরে ঘুম ভাঙ্গল।
রাতে ভালোই ঘুম হয়েছে। সকাল আটটার মধ্যেই তৈরি হয়ে নিলাম। গাড়ি ও গাইড সাড়ে আটটার মধ্যেই চলে আসবেন। রাজকীয় শহরের নিষিদ্ধ নগরীতে যাবার প্রোগ্রাম। হিউ এর সেøাগানটি তাৎপর্যপূর্ণ চৎবংবৎাবং ঃযব ঢ়ধংঃ ্ খড়ড়শং ঃড়ধিৎফ ঃযব ঋঁঃঁৎব. অতীতকে সংরক্ষণ করে ভবিষ্যতে এগিয়ে যাওয়া। কথাগুলোর মধ্যে কোনো হিংসা নেই কোনো ঘৃণা নেই। হিংসার রাজনীতি দেশকে ভাগ করে, এগিয়ে নেয় না।

ব্রেকফাস্ট শেষে তৈরি হতে হতেই গাড়িসহ গাইড চলে এলেন।
এখানেও গাড়ি ড্রাইভার ও গাইড সবাই নতুন। আমরা নিষিদ্ধ নগরী দর্শন ও বিখ্যাত প্রাচীন প্যাগোডা থিন মু দেখতে যাব। সংহোং নদীর তীরে থিন মু প্যাগোডা। হিউ থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে। সংহোং পাফিউম নদী হিসেবে সমধিক পরিচিত। হিউ শহরে জন্মানো ফুল মিষ্টি-গন্ধযুক্ত সুবাসের জন্য পরিচিত। ফুলগুলো প্রায়শই বাতাসে নদীর জলে উপর পড়ে এক সূক্ষ্ম ও মনোরম সুবাস তৈরি করে ও জলের পৃষ্ঠে ভেসে ওঠে। পারফিউম নদীটি প্রাচীন কাল থেকেই প্রাকৃতিক ফুল ও গাছপালার সুগন্ধসহ বিভিন্ন বনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে হিউ শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময়, নদীটি প্রাকৃতিক সুগন্ধ নিয়ে আসে এবং তারপর থেকে নদীর নাম হয় পারফিউম রিভার। পারফিউম নদীর তীরেই প্যাগোডা।

আমরা কয়েক মিনিটের মধ্যেই প্যাগোডার সামনে দাঁড়ালাম।
গাইড পথ দেখিয়ে নিয়ে গেলেন। কিংবদন্তিটি বলে, আজ যেখানে প্যাগোডাটি দাঁড়িয়ে আছে সেখানে অনেক কাল আগে এক বৃদ্ধা দাঁড়িয়ে স্থানীয় লোকদের বলেছিলেন,একজন প্রভু আসবেন এবং দেশের সমৃদ্ধির জন্য একটি বৌদ্ধ প্যাগোডা তৈরি করবেন। পরবর্তী সময় রাজা নগুয়েন হোয়াং ১৬০১ সালে বৌদ্ধ মন্দির নির্মাণের নির্দেশ দেন। ঐ রহস্যময় ইতিহাস ও কিংবদন্তিটি অন্বেষণ করতে দেশীয় ও বহিরাগত পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে। প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দির। সমতল পথ থেকে বেশ উঁচুতে। সিঁড়ি ভেঙ্গে উপরে উঠে এলাম। বিশাল সমতল চত্বরে মন্দির গড়ে উঠেছে। সুউচ্চ টাওয়ার। টাওয়ারের বাম দিকে একটি বিশাল ঘণ্টাকে কেন্দ্র করে প্যাভিলিয়ন। ঘণ্টাটি বিশাল আকারের জন্য বিখ্যাত, যার উচ্চতা ২.৪ মিটার এবং ওজন ৩২৮৫ কেজি। ঘণ্টাটি ১৮শতকের ব্রোঞ্জ ঢালাইয়ের অসামান্য কাজ বলে মনে করা হয়। টাওয়ারের ডানদিকে রয়েছে ১৭১৫ সালের ইতিহাস সমৃদ্ধ বিশাল এক পাথর। এটি এক মার্বেল পাথরের কচ্ছপের পিছনে স্থাপন করা হয়েছে, যা দীর্ঘায়ুর প্রতীক। মন্দিরের পেছনে অনেক জায়গা নিয়ে ফুলের বাগান। শান্ত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ। দীর্ঘ লম্বা এক কোর্টার, গাইড জানালেন এই কোর্টারগুলোতে প্রায় ১০০ শত ভিক্ষু বাস করেন। আমাদের সঙ্গেও দু’একজনের দেখা হলো।

প্রচন্ড গরম।
মন্দির দেখা শেষে গাছের ছায়ায় এসে দাঁড়ালাম। গাইড এসে জানালেন আমরা যন্ত্রচালিত নৌকায় রাজকীয় রাজপ্রাসাদ ও নিষিদ্ধ নগরী দেখতে যাব। মন্দির থেকে নেমেই নদীর ঘাট, নৌকা অপেক্ষা করছিল। পারফিউম নদীতে ঝিরঝির হাওয়া। গাইড সুমিষ্ট পানীয়ের ডাব এগিয়ে দিলেন। প্রায় ঘণ্টাখানেক নৌভ্রমণের পর রাজপ্রাসাদে এসে পৌঁছুলাম। ১৮০৪ থেকে ১৮৩৩ সালের মধ্যে নির্মিত দুর্গটি দুই মিটার পুরু দশ কিলোমিটার দেয়াল দিয়ে ঘেরা। দুর্গে প্রবেশ করার দশটি দরজা। দুর্গের ভেতর ১৪৮টি স্থাপনা, ফরাসি ও আমেরিকান যুদ্ধে সবকটি স্থাপনা ভেঙ্গে মাত্র ২০টি স্থাপনা টিকে আছে। দুর্গের ভেতর আর এক দুর্গ তার ভেতর রাজপ্রসাদ। দুই কিলোমিটার দীর্ঘ ও ছয় মিটার উঁচু দেয়াল দিয়ে ঘেরা নিষিদ্ধ নগরে বাস করতেন রাজ পরিবার। নিষিদ্ধ নগরের প্রবেশদ্বার দিয়ে প্রবেশ করার অধিকার ছিল মাত্র ৫ জনের। একজন দূত, একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও বাকি তিনজন উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী।

প্রধান দরজা নগুমন দিয়ে আমরা নিষিদ্ধ নগরে প্রবেশ করলাম।
বিশাল চত্বরে কার্পেট বোম্বিংয়ের চিহ্ন। তেমন কিছু অবশিষ্ট নেই। পুরানো রাজপ্রাসাদটি নতুন করে প্রলেপ দেয়া হয়েছে। ভেতরে মিউজিয়ম। রাজ রাজাদের ব্যবহৃত খাট, পালং, অস্ত্র ইত্যাদি। ১৯৪৫ এর ৩০শে আগস্ট হোচিমিন প্রেরিত প্রতিনিধিদের কাছে নগুয়েন সাম্রাজ্যের শেষ সম্রাট ক্ষমতা ত্যাগ করেন।
রাজপ্রাসাদ ছেড়ে বিশাল রাজকীয় সমাধিচত্বর। সামনে সরোবর। সরোবরের উপর চওড়া সেতু। সরোবরে লাল পদ্মের সমারোহ। কোনো সম্রাটের ক্ষমতা শেষ হবার পর পরিবার পরিজন ও বিশ্বস্ত কর্মচারীদের এখানে নিয়ে এসে বিশেষ রাজকীয় সৈনিকদের দ্বারা সবার শিরোচ্ছেদ শেষে কবর দেয়া হতো। কবরের কোনো চিহ্ন রাখা হতো না। রাজকীয় সমাধি দেখা শেষে লাঞ্চের পর স্থানীয় বাজারে গেলাম। দোকানীরা বিভিন্ন পণ্যের পশরা সাজিয়ে বসেছে। গাইড জানালেন বাঁশের তন্তুদ্বারা তৈরি একধরনের সাদা সার্ট শরীর শীতল রাখে। তেমনি এক শার্ট কেনা হলো বিশ ডলারে।
ইতোমধ্যে লাঞ্চের সময় হয়ে এল।
এজেন্সি আমাদের লাঞ্চের ব্যবস্থা করেছেন বেশ দূরে এক গ্রামের বাড়িতে। এই সুযোগে ভিয়েতনামের গ্রামও দেখে নেয়া। গাড়ি গ্রামের রাস্তা ধরল। আঁকাবাঁকা অসমতল রাস্তা। কোথাও কোথাও ভাঙ্গা রাস্তার কাজ হচ্ছে। রাস্তার দুপাশেই বাড়িঘর, দোকানপাট। আফ্রিকার মালাউইর গ্রামের রাস্তার মত খোলামেলা নয়। গাড়ি বাঁক নিয়ে এক সরু রাস্তায় ঢুকলো। এতো সরু যে একটি গাড়ির যাওয়া কষ্টকর। অনেকক্ষণ পর উঁচু দেয়ালে ঘেরা এক দরজার সামনে গাড়ি দাঁড়ালো। গাইড জানালেন আমরা পৌঁছে গেছি। দরজা দিয়ে প্রবেশ করেই বেশ জায়গা নিয়ে একবাড়ি। বাড়ির কর্তাসহ কয়েকজন বেরিয়ে এলেন। বাড়ির উঠানে বিভিন্ন ফলের গাছ। লাল কংক্রিটের আঙ্গিনা পেরিয়ে বসার যায়গা। প্রচন্ড গরম। এর মধ্যে লাঞ্চ পরিবেশন করা হলো। মাছ মাংস শাক সবজি সবই গ্রামে তৈরি।

হোচিমিন

এই ঘরেই হোচিমিন জন্মগ্রহণ করেছিলেন

রাজকীয় শহর হিউ থেকে ৩৭৭ কিলোমিটার দূরে হোয়াং ট্রু গ্রাম। এই গ্রামে অতি দরিদ্র এক কৃষকের ঘরে ১৮৯০ এর ১৯শে মে জন্ম নেয় এক শিশু। তখনো হয়তো কেউ ভাবতে পারেনি এই শিশু হোচিমিন একদিন রাজতন্ত্র উচ্ছেদ করবে। ভবিষ্যতের ভাষা কেউ পড়তে পারে না। কিন্তু ভবিষ্যত এগিয়ে চলে। হিউয়ের জাতীয় একাডেমির ছাত্র ছিলেন হোচিমিন। সম্রাট বাও দাই এবং ফরাসি প্রভাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে একাডেমি থেকে বহিষ্কৃত হন। ১৯১১ সালে এক ফরাসি স্টিমারে বাবুর্চির চাকরি নিয়ে পরবর্তী কয়েক বছর সমুদ্রে কাটান। আফ্রিকা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড এবং ব্রিটেনসহ বিভিন্ন দেশ ভ্রমণের সময় দেশের জনগণ, জনগণের অধিকার বিষয়ে প্রভূত জ্ঞান অর্জন করেন। ফ্রান্সে বসবাসের সময় ভিয়েতনামী অভিবাসীদের নিয়ে একটি দল গঠন করেন। ভার্সাই শান্তি সম্মেলনে প্রতিনিধিদের কাছে আবেদন করে বলেন, ফরাসি ঔপনিবেশিক সরকার যেন জনগনের অধিকার প্রদান করেন।
এইসময় তিনি নবগঠিত ফরাসী কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিয়ে ভিয়েতনামের জাতীয় অন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানি ১৯৪০ সালে ফ্রান্সকে পরাজিত করলে, হো এটিকে ভিয়েতনামী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সুযোগ হিসাবে দেখেন। হোচিমিন তাঁর একান্ত সহচর নুগুয়েন গিয়াপ এবং ফাম ভ্যান ডং কে সঙ্গে নিয়ে ১৯৪১ সালের জানুয়ারিতে ভিয়েতনামে ফিরে আসেন এবং ভিয়েতনামের স্বাধীনতার জন্য ভিয়েতমিন বা লীগ সংগঠিত করে নতুন সংস্থার জন্য চীনের সাহায্য কামনা করেন।
রাজকীয় শহর দেখা শেষে আমাদের গন্তব্য সাইগন বা হোচিমিন সিটি।
হিউ থেকে বিদায় নেবার পালা। হোচিমিন সিটিতে যাবো বিমান পথে। প্রায় দেড় ঘণ্টার ফ্লাইট। এজেন্সি থেকে জেনি ফ্লাইটের টিকেট আগেই পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। একটা চল্লিশে ফ্লাইট। ব্রেকফাস্টের পর বেলা বারটায় চেকআউট করার পরপরই ডানাং বিমান বন্দরে পৌঁছে দেবার জন্য গাড়ি চলে এল।
বেলিফুল গাছটি হাতে ঝুলিয়ে নেয়া হলো। ডানাং এয়ারপোর্টে এসে জানা গেল আমাদের ফ্লাইট লেট। একটু সংশয় হলো। হোচিমিন সিটি এয়ারপোর্টে অপেক্ষাকারী ড্রাইভারকে যদি না পাওয়া যায় তো অসুবিধা হতে পারে। জেনিকে মোবাইলে পরিস্থিতি জানালাম। জেনি তখন হ্যানয়-এ। পরক্ষণেই উত্তরে জেনি জানালো,‘ভিয়েতনাম এয়ার আমাদের জাতীয় এয়ারলাইন্স, এরা সাধারণত ভুল করে না, লেট করে না।‘ জেনির কথায় জাতীয়তাবাদীর সুর। ঘাবড়ে গেলাম, আমাদেরই ভুল হলো কি না! মিনিট দশেক পর জেনি আবার মেইলে জানালো,‘বিমান অফিসে খোঁজ নিয়ে দেখলাম একটু লেট আছে তবে হোচিমিন সিটিতে ল্যান্ডিংয়ের পর কোনো অসুবিধে হবে না।’
অবশেষে বিমান ছাড়ার নির্দেশ এলো, আমরা কাউন্টারে যেয়ে দাঁড়ালাম। লাগেজে ট্যাগ লাগিয়ে ব্যান্ডে তুলে দেয়া। চারটি কাউন্টারে চারজন বিমানকর্মী এসে বসলেন। একটি ছেলে, তিনটি মেয়ে। তারা তাদের কম্পিউটারগুলো ঠিক করে নিয়ে হঠাৎ কাউন্টার থেকে নেমে যাত্রীদের কাছে এসে দাঁড়িয়ে মাথা ঝুকিয়ে বাউ করে যাত্রীদের আহ্বান জানালেন। অনেক দেশ ঘুরেছি কিন্তু যাত্রীদের প্রতি এই সম্মান আর কোথাও দেখিনি।

সুইডেন
২৮-৬-২০২৪


 নিউজটি পড়া হয়েছে ২৯৩ বার  


 এই ধারাবাহিকের সকল পর্ব  

•   ভিয়েতনাম: দ্যা ল্যান্ড অব ড্রাগন্স


•   হ্যালংবে


•   ভিয়েতনামের ট্র্যাজিক মাইলাই ও শান্ত হোইআন


•   হিউ ভিয়েতনাম ও হোচিমিনের জন্মস্থান


•   সায়গনের ১২১ কিলোমিটার লম্বা চুচি টানেল


•   ওয়ার মিউজিয়াম: মার্কিন নৃশংসতার দলিল


•   মেকং ডেল্টা






 

পরবাস

মেকং ডেল্টা

ওয়ার মিউজিয়াম: মার্কিন নৃশংসতার দলিল

নবেল পুরস্কার অনুষ্ঠানে

সায়গনের ১২১ কিলোমিটার লম্বা চুচি টানেল

ভিয়েতনামের ট্র্যাজিক মাইলাই ও শান্ত হোইআন

হ্যালংবে

ভিয়েতনাম: দ্যা ল্যান্ড অব ড্রাগন্স

মাকে মনে পড়ে আমার মাকে মনে পড়ে...

ইউথানেসিয়া: মৃত্যু নিয়ে বাণিজ্য!

মারিয়ার শেষ নিঃশ্বাস

পরবাস বিভাগের আরো খবর






সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি:
আবদুল্লাহ আল হারুন
প্রধান সম্পাদক:
আসিফ হাসান নবী

সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. জিয়াউল হক
বিশেষ সংবাদদাতা:
র‌বিউল ইসলাম সো‌হেল

আমাদের মানচিত্র

ঠিকানা: দেওয়ান কমপ্লেক্স (৩য় তলা), ৬০/ই/১, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়:
কক্ষ নং ১৪/সি, নোয়াখালি টাওয়ার (১৪ তলা), ৫৫-বি, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০

ফোন: ০১৯১৪-৭৩৫৮৫৮, ০১৯১৪-৮৭৫৬৪০
ইমেইল: info@amadermanchitra.news, amadermanchitrabd@gmail.com

Location Map
Copyright © 2012-2024
All rights reserved

design & developed by
corporate work