(পূর্ব প্রকাশের পর)
লিয়াকত হোসেন:
বিবর্ণ বোর্ডগুলোকে পাশে রেখে আমরা প্রবেশদ্বারে দাঁড়ালাম।
কয়েকজন গাইড দাঁড়িয়ে। তাঁদের মধ্য হতে একজন এগিয়ে এলেন। কবরগুলো চিনিয়ে দেবেন, দক্ষিণা পঞ্চাশ রুপি। আমরা একজন গাইড নিয়ে খোশবাগে প্রবেশ করলাম। কারণ গাইড ছাড়া কবরগুলো চেনা ও জানা সম্ভব নয়। গাইড আমাদের প্রথমেই নিয়ে এলেন বিশাল একটি বেদীর উপর। জানালেন এখানে সাতটি অজানা ব্যক্তির কবর আছে। এই সাত ব্যক্তি সম্ভবত ছিলেন সওদাগর। পলাশী যুদ্ধের ক্রান্তিলঙ্গে তাঁরা দুর্ভাগ্যক্রমে উপস্থিত হয়েছিলেন। মীরনের আদেশে তাঁদের খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে হত্যা করা হয়। মীরন সিরাজের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। প্রায় সত্তুর জনের তালিকা তৈরি করেছিলেন। তালিকা ধরে একে একে তিনি সবাইকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। গাইড আরো জানালেন, মীরনের কবর মুর্শিদাবাদে নেই। বক্সারের যুদ্ধে আহত হয়ে রাজমহলে মারা যান। ইংরেজরাই তাকে হত্যা করে বজ্রঘাতে মৃত্যুর অপবাদ ছড়ায়।
খোশবাগের ভেতর একটি সাদা রঙ্গের অপূর্ব মসজিদ। মসজিদটি বন্ধ তাই নামাজ হয়না।
আমরা পায়ের জুতা খুলে আরো ভেতরের দিকে অগ্রসর হলাম। হাতের বাঁদিকে পর পর তিনটি কবর তার মধ্যে একটি সিরাজের একান্ত সহচর গোলাম হোসেনের। একটু দূরে খোলা সবুজ ঘাসের উপর গাছের ছায়ায় দানেশ ফকিরের কবর। এই দানেশ ফকির অর্থ পুরস্কার লাভের আশায় ইংরেজদের হাতে সিরাজকে ধরিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু ইংরেজরা তাকে পুরস্কৃত করেনি। গুলি করে হত্যা করেছিল। কবরটির কাছে যেতে ইচ্ছে করলোনা। একটু এগিয়েই নবাব আলিবর্দির কন্যা ঘসেটি বেগমের কবর। যিনি সারাজীবন সিরাজের বিরোধিতা ও ষড়যন্ত্র করে গিয়েছেন। নবাব আলিবর্দির স্ত্রী বেগম সরফুন্নেসার কবরও এইখানে। এখানে আরো একজনের কবর আছে। সিরাজের হত্যাকারি মুহম্মদী বেগের। প্রশ্ন জাগে সিরাজের হত্যাকারি, সিরাজকে ধরিয়ে দেয়া বিশ্বাসঘাতকদের মাঝে সিরাজ কি স্বস্তিতে শুয়ে আছেন?
আর একটু এগিয়ে সিরাজ ও লুৎফান্নেসা বেগম ও সিরাজের পায়ের কাছে তাঁদের দুই মেয়ের সমাধি।
ভারতীয় আর্কিয়োলজিক্যাল সার্ভে বিভাগ ‘খোশবাগে’র তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে। তবে ‘খোশবাগ’ দেখে মনে হয় বরাদ্দকৃত অর্থ বোধ হয় ভাগীরথীর ওপারেই শেষ হয়ে যায়, নদী পেরিয়ে এপারে আসেনা। নতুবা বাংলা বিহার উড়িষ্যার শেষ স্বাধীন নবাবের সমাধির এই দুরবস্থা কেন? এখানেতো কোন মিউজিয়ামও নেই। হাজারীবাগ প্রাসাদের মতো এখানেওতো একটি মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠা করা যেতো! খোশবাগ দেখে মন ভারাক্রান্ত হল। মনে হয় বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার শেষ স্বাধীন নবাবের প্রতি তাঁর জীবদ্বশায় ও মরণের পরেও অবহেলা করা হচ্ছে
খোশবাগ হতে বের হয়েই সাইফুদ্দিন আগ্রহ নিয়ে জানালো সে আরো কয়েকটি স্পটে আমাদের নিয়ে যাবে।
আমাদের টুকটুক ভাঙ্গাচোরা রাস্তা দিয়ে এগিয়ে চলেছে। রাস্তার দুধারে বিস্তৃত প্রান্তর। দুপাশে টমেটো ও অনান্য সবজির ক্ষেত। রাস্তা কোথাও কোথাও ডেবে গেছে, বৃষ্টির জল জমে আছে। সাইফুদ্দিন এর মধ্যেই এগিয়ে চলল। অবশেষে আমরা উপস্থিত হলাম কিরীটেশ্বরী মন্দিরে। হিন্দু পুরাণ মতে সতীর মৃত্যুর পর তার দেহ ৫১টি খন্ড হয়ে বিভিন্ন স্থানে পরে। এইখানেও দেহের এক খন্ড পরেছিল। কিরীটেশ্বরী মন্দিরের পাশে অতি পুরাতন শিবমন্দির। মন্দিরটিতে ফাটল ধরেছে। লাল ইটগুলো খুলে খুলে পরছে। সাইফুদ্দিন আমাদের আরো একটি মন্দিরে নিয়ে গেল। মন্দিটি একটু ভেতরে, বড় রাস্তা হতে হেঁটে যেতে হয়। ভট্টবাটী ধাম। কর্ণাটক হতে বারশ ঘর ভট্ট ব্রাক্ষণ এখানে এসে বসবাস শুরু করেছিলো। তখন থেকেই জায়গাটির নাম ভট্টমাটি। বর্তমানে কোন ব্রাক্ষণ নেই, তবে অপূর্ব মন্দিরটি রয়েছে। মন্দিরের গায়ে এমন পোড়ামাটির অলংকরণ মুর্শিদাবাদেও নেই। বলা হয়ে থাকে রানী ভবানীর সমসাময়িক কালে মন্দিরটি তৈরি হয়।
দিন প্রায় শেষ।
সাইফুদ্দিন আমাদের হোটেলের সামনে পৌঁছে দিয়ে জানালো আগামীকাল পলাশী। আমবাগান যেখানে যুদ্ধ হয়েছিলো।
পলাশীর যুদ্ধ ও তারপর কি হয়েছিলো পলাশী প্রান্তরে? সিরাজ কি যুদ্ধ চেয়েছিলেন?
ঐতিহাসিক এস.সি.হিল, পিটার মার্শাল, ক্রিস বেইলি এমনকি রজতকান্ত রায়ের পুস্তকেও দেখা যায় সাধারণত একই বক্তব্য। তাহল পলাশির ষড়যন্ত্রে ইংরেজদের ভুমিকা ছিলনা। সিরাজ এতই দুশ্চরিত্র, দুর্বিণীত ও নিষ্ঠুর ছিলেন যে সবাই তার ওপর বীতশ্রদ্ধ হয়ে পরেছিলেন। ইংরেজদের বাংলা বিজয় আকস্মিক ঘটনামাত্র। সিরাজ যে বাংলার মসনদ হারালেন তার জন্য মূলত সিরাজই দায়ী। কিন্তু বর্তমানে পলাশী সম্পর্কে যেসব দলিল দস্তাবেজ খুঁজে পাওয়া গেছে, বা যাচ্ছে তাতে ঐ ঐতিহাসিকদের বিশ্লেষণ সত্য বলে প্রমাণিত হয়না। ইংরেজরা সাতসমুদ্র তের নদী পার হয়ে এদেশে আসতো অর্থ উপার্জনের জন্য, যাতে দেশে ফিরে বাকি জীবন আরাম আয়েশে কাটাতে পারে। ১৭৩০ হতে ১৭৪০ দশকে কোম্পানি কর্মচারীদের ব্যক্তিগত ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল রমরমা। ঐ সময় বাংলা ছিল পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে সম্পদশালী ও জনবহুল দেশ। কৃষিব্যবস্থা ছিল সর্বোৎকৃষ্ট। পলাশীর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বৃটিশ রাজকীয় বাহিনীর মেজর করনেইলিও বলেছেন বঙ্গের জমি অত্যন্ত উর্বর, বিশাল বিশাল নদীর কারণে জলের অভাব নেই। বছরে তিনটি ফসলের উৎপাদন বাংলাকে সমৃদ্ধ করেছিল। বাংলার সমৃদ্ধির টানেই সাতসমুদ্র তের নদী পার হয়ে দুর্বৃত্তরা এই দেশে আসতো। এবং এতো ঊর্বরভূমি ছেড়ে দুর্বৃত্তরা কি এই দেশ ছেড়ে যেতে চাইবে? ইংরেজরা নিজেদের স্বার্থেই যুদ্ধ বাঁধিয়েছিল।
নবাব সিরাজউদ্দৌলা চেয়েছিলেন ইংরেজরা ব্যবসা-বাণিজ্য করছে করুক, তবে নবাবের সঙ্গে তাদের চুক্তি মেনে চলুক। সিরাজ ইংরেজদের বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ এনেছিলেন
১. ফোর্ট উইলিয়াম কেল্লার সংস্কার করা
২. দস্তক বা বিনাশুল্কে বাণিজ্য করার অনুমতিপত্রের অপব্যবহার না করা আর
৩. নবাবের অপরাধী প্রজাদের কলকাতায় আশ্রয় না দেয়া।
ফোর্ট উইলিয়ামকে সুসংহত করার সংস্কার ইংরেজরা বন্ধ করেনি। দস্তক বা বিনাশুল্কে বাণিজ্য করার অনুমতিরপত্রের অপব্যবহার বন্ধ করেনি। যত্রতত্র এশীয় বণিকদের তারা দস্তক দেয়, যার ফলে নবাব শুল্ক হারাতে শুরু করেন ও নবাবের বিদ্রোহী প্রজা কৃষ্ণদাসকে কলকাতায় আশ্রয় প্রদান ও কৃষ্ণদাসের পিতা রাজবল্লভ ঢাকার সরকারি তহবিল তসরুপ করেছিলেন ও ইংরেজ তাদের আশ্রয় দিয়েছিল। কিন্তু ইংরেজদের কাছে দূতের পর দূত প্রেরণ করেও মিমাংসার পরিবর্তে তারা নবাবের বিরুদ্ধাচারণ করে।
এই সবের পরিপ্রেক্ষিতে নবাব সিরাজউদ্দৌলা কলকাতা আক্রমণ করেন।
মেজর করনেইলি তাঁর বিবরণীতে বলেছেন, ২০ জুন ১৭৫৬ সালে কলকাতার দুর্গ অধিকারের পর নবাব পরাজিত ইংরেজ সৈন্যদের বন্দি করেননি। পরাজিত ইংরেজ সৈন্যরা শহরে যথেচ্ছ ঘুরে বেড়াতে গিয়ে মদ্যপ অবস্থায় স্থানীয় মুসলমানদের উপর চড়াও হয়। তখন নবাব ক্ষিপ্ত হয়ে সব ইংরেজ সৈন্যকে গ্রেপ্তারের আদেশ দেন। এবং সৈন্যদের অবরোধ কক্ষে আটক করে রাখা হয়। মেজর করনেইলি বলেছেন, নবাব যা করেছিলেন তা ছিল সঙ্গত। পরাজিত সৈন্যদেরতো হয় হত্যা নয়তো গ্রেপ্তার করে রাখার কথা। কিন্তু এই ঘটনা পরবর্তী সময়ে ইংরেজরা বড় করে তুলে ধরে, নাম দেয়া হয় ‘অন্ধকূপ’ হত্যা। ঐতিহাসিক ব্রজেন গুপ্ত বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন যে বন্দির সংখ্যা ছিল ৭৯ হতে ৮৫ র মধ্যে। আর নিহতের সংখ্যা ৪৩ কিংবা সর্বনিম্ন ১৮ জন। ইংরেজ ঐতিহাসিকরা ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করে প্রভাবিত করেছেন। মেজর করনেইলি বলেছেন এতে নবাবকে অন্যায়ভাবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ইংরেজ সেনা কর্মকর্তা মেজর করনেইলি অন্ধকুপ হত্যার জন্য সিরাজকে মোটেই দায়ী করেননি।
মেজর করনেইলি আরো উল্লেখ করেছেন, ইংরেজ বিতারণ নবাব সিরাজউদ্দৌলার উদেশ্য ছিলনা। তা হলে সেসময় ফলতায় অবস্থানরত ইংরেজ সৈন্যদের এবং জাহাজে আশ্রয়গ্রহণকারী গভর্নর ড্রেকসহ কোম্পানির কর্মকর্তাদের তিনি নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারতেন। নবাব চেয়েছিলেন ইংরেজরা শুধু বণিক হিসেবেই থাকুক এবং তাঁর নিয়ন্ত্রণ মেনে নিক।
নবাব সিরাজউদ্দৌলার সামরিক শক্তির সঙ্গে ইংরেজদের শক্তির তুলনাই ছিলনা।
মেজর করনেইলি উল্লেখ করেছেন,তখন সুবা বাংলা ছিল ইউরোপের যেকোন দেশের চেয়ে বড়। বার্ষিক কর আদায় হতো ৩০ লাখ রুপি এবং নবাব যেকোন সময় এক লাখ সৈন্য সমাবেশ করতে পারতেন। কামান ও অস্ত্রের অভাব ছিলনা। এই রকম একটি শক্তিকে বর্ষাকালে নদী পার হয়ে দূর্গ হতে একশত মাইল দূরে গিয়ে আক্রমণ করার সাহস কোথায় পেয়েছিল ইংরেজ বাহিনী? এর পশ্চাতে ছিল নবাবের প্রতি বিশ্বসঘাতকতা। ১৭৫৭ সালের ১৩ জুন ইংরেজ বাহিনী কলকাতা হতে মুর্শিদাবাদের পথে রওয়ানা হয়। একদল নদী পথে অন্য দল নদীর তীর ধরে হাঁটা পথে। এভাবে দীর্ঘ মাইল পাড়ি দিয়ে দুজন ক্যাপ্টেনের নেতৃত্বে ২০০ সেনার একটি দল পলাশীর আম্রকাননে পৌঁছায় এবং পরিশ্রান্ত সেনাদল বিছানাপত্র ছাড়াই ঘুমিয়ে পরে। মেজর করনেইলি বলেছেন এই সময় নবাবের চার পাঁচশ সেনা পুরো ইংরেজ বাহিনীকে তছনছ করে দিতে পারতো। নবাবের বিশাল বাহিনী মাত্র দু’মাইল দূরে ছাউনি ফেলেছিল। কিন্তু তা হয়নি। হয়েছিলো উল্টোটা। সুযোগ বুঝে ইংরেজ বাহিনী ২৩ জুন বেলা দুটায় বিশ্রামরত নবাব বাহিনীর উপর ঝাপিয়ে পরে এবং যুদ্ধে মিরমদন নিহত হন। বিকেল পাঁচটায় সমগ্র ইংরেজ বাহিনী পলাশীর আম্রকানন থেকে বেরিয়ে আসে এবং কামানসহ নবাবের অস্ত্রশস্ত্র দখল করে নেয়।
যুদ্ধের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে নবাব জানতেন। ফরাসীরা তাঁকে সময় সময় অবহিত করেছিল। কিন্তু নবাব আশাবাদী ছিলেন যে তাঁর বিরাট বাহিনীর সঙ্গে ইংরেজদের পেরে উঠা সম্ভব নয়। পলাশী যুদ্ধের মাত্র সাড়ে পাঁচ আগে নবাব সিরাজকে আকস্মিক আক্রমণ করে গুপ্ত হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। মেজর করনেইলি উল্লেখ করেছেন, ইংরেজদের বিশাল অস্ত্রশস্ত্রের মজুদ গড়তে দেয়া সমিচীন হয়নি আর মিরমদনের মৃত্যুই যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এর পর পরই নবাব সিরাজ মুর্শিদাবাদ ছেড়ে চলে যান। যুদ্ধের গতি প্রকৃতি টের পেয়ে মিরমদন নবাবকে বলেছিলেন মীরজাফরকে গ্রেফতার করতে তাহলে ইংরেজ আর অগ্রসর হবেনা। মীর জাফরের অধীন সেনা নিস্ক্রিয় ছিল আর নবাবের কামানগুলো ছিলো অত্যন্ত ভারি। ষাড়-মহিমের কাঁধের উপর পাটাতন বানিয়ে সেগুলো বহন করা হচ্ছিল। ফলে কামানগুলোর স্থান পরিবর্তনে ছিল বিরাট বাঁধা। অপরদিকে ইংরেজদের কামানগুলো ছিল হালকা ও চাকা লাগানো। নবাবের অর্ধলক্ষ সৈনিকের মধ্যে মাত্র ৫০০ ও ইংরেজদের মাত্র ১৮ জন সৈন্য নিহত হওয়ার মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ উপনিবেশ স্থাপনের পলাশীর যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়।
ভাগ বাঁটোয়ারা
পলাশী বিজয়ের পর জুলাইয়ের তিন তারিখে মুর্শিদাবাদে ইংরেজদের যুদ্ধ পরিষদের সভা বসে।
আলোচ্য বিষয় যুদ্ধের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থের ভাগ বাঁটোয়ারা।
ভাগ বাঁটোয়ারায় মেজর করনেইলি লাভ করেন প্রায় তিন হাজার পাউন্ড। শীর্ষস্থানীয় সামরিক অধিনায়কেরা যুদ্ধশেষে বিপুল সম্পদের মালিক হন। অ্যাডমিরাল ওয়াটসন পান তিন লাখ রুপি, মেজর কিলপ্যাট্রিক ৬০ হাজার পাউন্ড। মীরজাফর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নবাব হলে তিনি উপঢৌকন হিসেবে ২০ লাখ পাউন্ড দেবেন। যুদ্ধের দুমাস পর রবার্ট ক্লাইভ নবাবের কোষাগার হতে নিয়েছিলেন ১২ লাখ রুপি। মীর জাফর, জগৎশেঠ, রায়দুর্লভ, উমিচাঁদ আর ইংরেজদের মধ্যে চুক্তি হয়েছিলো সিরাজের পরাজয়ের পর তাঁর সম্পত্তি থেকে ইংরেজদের দেয়া হবে ৩ কোটি টাকা। পলাশী যুদ্ধের পর পরই সিরাজ কর্তৃক কলকাতা আক্রমণের ক্ষতিপূরণ বাবদ মীরজাফর ১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা দেয়ার চুক্তিসহ কলকাতা ও সন্নিহিত অঞ্চল ইংরেজ কোম্পানির হাতে সমর্পণ করেন।
প্রায় সব গ্রন্থকার সিরাজের দোষ ধরার ব্যাপারে আগ্রহী হলেও মীরজাফরদের দোষী সাব্যস্ত করার ব্যাপারে মোটেই আগ্রহী ছিলোনা। ইংরেজ আমলে রচিত ইতিহাসে ইংরেজদের দোষের উল্লেখ নেই, নেই মীলজাফরেরও। যুদ্ধশেষে মেজর করনেইলিসহ রাজকীয় বাহিনীর সৈন্যরা কিছুদিন পর দেশে ফিরে যান। রাজকীয় বাহিনী সাধারণত অল্প সময়ের জন্যই ভারতবর্ষে আসতো আর্থিকভাবে লাভবান হবার জন্যই।
পুনচঃ
কলকাতা ফেরার সময় হল।
সাইফুদ্দিন পুরো মুর্শিদাবাদ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখিয়েছে। বিষ্ণু খাবারের কোন ত্রুটি করেনি। ভোরে ফেরার ট্রেন, ভাগীরথী এক্সপ্রেস। বিষ্ণু লাগেজগুলো ট্রেনে উঠিয়ে দিয়ে বললো, স্যার পৌঁছে সংবাদ দেবেন। সুইডেন ফেরার পর বিষ্ণু টেলিফোন করেছিল, ‘স্যার, এবার আমের ফলন ভালো হয়েছে। মুর্শিদাবাদের আম খেতে আসবেন।’ পলাশীর আম বাগান বাংলার ইতিহাসই উলট পালট করে দিয়েছে।
(শেষ)
সূত্র :
১. পলাশির অজানা কাহিনীঃ সুশীল চৌধুরী
২. মোজাফফরনামা: করম আলি খান
৩. পলাশীর এক ইংরেজ সৈনিকের কালপঞ্জী: সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ (Journal of an English Soldier of the Battle of Plassey)
সুইডেন, স্টকহোম, ২৩ মে ২০১৯