ঢাকা, বাংলাদেশ  |  বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪



  বিভাগ : ফিচার তারিখ : ২৬-০১-২০২৩  


‘হিপনোথেরাপি: সম্মোহনের মাধ্যমে চিকিৎসাপদ্ধতি’


  আসিফ হাসান



আসিফ হাসান: তীব্র আবেগ ও কল্পনা শক্তি দ্বারা অন্যের মনকে প্রভাবিত করা এবং পরিচালনা করাকে বলা হয় হিপনোসিস। হিপনোসিস অর্থ সম্মোহন। সম্মোহন বা হিপনোসিস সম্পর্কে আমরা অনেকেই কম-বেশি জানি। যোগচর্চার মতোই এটি একটি প্রাচীন পদ্ধতি। ভারত উপমহাদেশেই এর উৎপত্তি। এই পদ্ধতির মাধ্যমে যে চিকিৎসা দেয়া হয় সেটিকে বলা হয় হিপনোথেরাপি। স্বাস্থ্য ও মনচর্চা তথা আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতে হিপনোথেরাপি যে অবদান রাখতে পারে তা হয়ত আমরা অনেকেই জানি না। উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, ব্রিটিশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক নিযুক্ত একটি কমিটি বিস্তর অনুসন্ধানের পর রায় দেয় হিপনোটিজম একটি বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি। এরপর যত দিন এগিয়েছে চিকিৎসক-বিজ্ঞানীরা এই বিদ্যাটির বিষয়ে উৎসাহী হয়ে পড়েছেন। সেইসঙ্গে শুরু হয়েছে নিত্যনতুন গবেষণা। অতএব এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে সম্মোহন বা হিপনোটিজম একটা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি।

হিপনোথেরাপিকে বলা হয় ‘প্রোগ্রামিং অব সাব কনসাস মাইন্ড’। একজন রোগীকে যখন হিপনোথেরাপি প্রয়োগ করা হয়, তখন তার মস্তিষ্কের আলফা স্তরে এক ধরনের তরঙ্গের সৃষ্টি হয়। এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে বিশ্বের অনেক দেশ যেমন- যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, চীন এবং ইউরোপের অধিকাংশ দেশেই মানুষের নানাবিধ সমস্যার সমাধান করা হচ্ছে। হিপনোথেরাপির মাধ্যমে মানুষের মানসিক সমস্যা, ডিপ্রেশন, উত্তেজনা, অনিদ্রা, ভয়, ক্ষুধামন্দা, স্থূলতা ও ব্যথাসহ অনেক জটিল সমস্যার সমাধান করা হচ্ছে। এগুলোর প্রতিটির জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা হিপনোটাইজ থিওরি।

হিপনোটিজম বেশ প্রাচীন বিদ্যা। প্রাচীন মানব সভ্যতার অনেকেই এই বিদ্যাটিকে ভাবতো যাদু বিদ্যা। যদিও এর উৎপত্তি ভারতেই বলে ধারণা। কেউ হিপনোটিজম করলে মানুষ মনে করতো তার অলৌকিক ক্ষমতা রয়েছে। ১৮৪০ সালে স্কটল্যান্ডের ড. জেমস ব্রেড এই বিদ্যার নাম দেন ‘হিপনোটিজম’। নামের পেছনে অবশ্য কার্যকরণ আছে। হিপনোটিজম শব্দটির উৎপত্তি গ্রিক শব্দ হিপনোস (ঐুঢ়হড়ং) থেকে। এই হিপনোস শব্দের অর্থ হচ্ছে, ‘ঘুম’। যেহেতু সম্মোহিত ব্যক্তি অনেকটা ঘুমের ঘোরেই হিপনোটাইজড হয়ে কাজ করতে থাকেন, তাই এই বিদ্যাকে হিপনোটিজম নাম দেয়া হয়।

অনেকের কাছে মনে হতে পারে, সম্মোহন মানে জাদুবিদ্যা। কিন্তু ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। এই সম্মোহন শব্দটাকেই ভিত্তি করে বিশ্বে এক অভিনব চিকিৎসা পদ্ধতি উদ্ভাবিত হয়েছে অনেক আগে, যার নাম হিপনোথেরাপি। এটি বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত ও প্রমাণিত। আমাদের দেশে অনেক থেরাপিই প্রচলিত যেমন- কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশন থেরাপি, যা ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছে। হিপনোথেরাপি শব্দটির সঙ্গে আমরা পরিচিত হলেও এর তেমন কোনো কার্যকর প্রয়োগ আমাদের দেশে এখনও দেখা যায়নি।

হিপনোথেরাপি এমন এক থেরাপি, যা একজন ব্যক্তির চেতনা পরিবর্তন করে। আপনি তখন এমন এক জগতে চলে যাবেন যে আপনি শুধু তা-ই দেখবেন বা অনুভব করবেন যা আপনাকে দেখতে বলা হবে। এটি এক ধরনের শিথিলতা এবং তীব্রতার কল্পনা শক্তির দ্বারা অস্বাভাবিক স্বপ্নায়ন অবস্থার বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে- যা অনেকটা ঘুমের মত মনে হলেও আসলে ঘুম নয়। কারণ সম্মোহিত ব্যক্তি পুরোটা সময় সজাগ থাকে। অধিকাংশ সময় এটাকে দিবা স্বপ্নের মত মনে হয়। অথবা কোন বই বা মুভিতে নিজেকে হারিয়ে ফেলার মত। হিপনোসিস চলাকালীন মস্তিষ্কের সচেতন অংশকে সাময়িকভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ঐ ব্যক্তির বিক্ষিপ্ত চিন্তাগুলোকে কেন্দ্রীভূত করা হয় এবং তাকে শিথিল করার দিকে মনোনিবেশ করা হয়। অবচেতন মনে আপনি এতোটাই প্রভাবিত হবেন যে, আপনি সম্মোহিত হয়ে একটি নির্দিষ্ট আচরণ করতে বাধ্য হবেন।

’৮০-র দশকে বিখ্যাত গোয়েন্দা সিরিজ মাসুদ রানার লেখক কাজী আনোয়ার হোসেন লিখেছিলেন ‘আত্মসম্মোহনের মাধ্যমে ধূমপান ত্যাগ’। বইটি সে সময় ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিলো। অনেকেই চেষ্টা করেছিলেন বইটিতে বর্ণিত পদ্ধতি ব্যবহার করে ধূমপান ত্যাগের। অনেকে সফলও হয়েছিলেন বলে পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিলো। পৃথিবীর অনেক দেশেই সম্মোহনের মাধ্যমে চিকিৎসা দেয়া বৈধ। এ নিয়ে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর ডিগ্রিও দেয়া হয়।

আমাদের দেশেও এই পদ্ধতির মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা দেয়ার বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে সাইকোলজিক্যাল সমস্যাগুলোর সমাধান করা সম্ভব হবে এই অভিনব পদ্ধতির মাধ্যমে। তাছাড়া হিপনোথেরাপির মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীকে সহজেই শনাক্ত করা সম্ভব। শুধু তাই নয়, এর মাধ্যমে অপরাধীদের কাছ থেকে বের করা যাবে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। মাদকাসক্ত ব্যক্তির চিকিৎসায় হিপনোথেরাপি হবে অনেক ফলপ্রসূ। দেশে দক্ষ হিপনোথেরাপিস্ট তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় কোর্স, প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণের পাশাপাশি উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা গেলে খুলে যেতে পারে এক নতুন সম্ভাবনার দুয়ার। হিপনোথেরাপি নিয়ে বাংলাভাষায় সম্ভবত এত বিস্তৃত পরিসরে কোনো বই লেখা হয়নি।

লন্ডনপ্রবাসী মুগনী চৌধুরী ‘হিপনোথেরাপি: সম্মোহনের মাধ্যমে চিকিৎসাপদ্ধতি’ নামে বাংলাভাষায় একটি বই লিখেছেন। যা প্রকাশ করেছে পাণ্ডুলিপি প্রকাশনী। বইটির বাংলাদেশে একমাত্র পরিবেশক অঙ্কুর প্রকাশনী। এছাড়া অনলাইনে অর্ডার করতে চাইলে রকমারি ডট কমেও পাওয়া যাবে। সম্মোহন বা হিপনোসিস সম্পর্কে আগ্রহীরা এ বিষয়ে অত্যাধুনিক সব তথ্য জানতে চাইলে বইটি সংগ্রহ করতে পারেন। হিপনোথেরাপির ব্যবহারিক প্রয়োগ- যেমন কীভাবে নানারকম শারীরিক ও মানসিক সমস্যা সহজেই সমাধান করা যায়, তা জানতে এ বইটি বেশ সাহায্য করবে। পেশাগতভাবে হিপনোথেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসাসেবার সাথে যারা যুক্ত তারাও এই বইটির মাধ্যমে প্রচুর উপকৃত হবেন।

লেখক মুগনী চৌধুরী ১৯৮০ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অ্যারোনেটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ উচ্চশিক্ষা নেয়ার সময় সেদেশের নিউ সাউথ ওয়েলস স্কুল অব হিপনোথেরাপি থেকে প্রফেশনাল হিপনোথেরাপির উপর ডিপ্লোমা অর্জন করেন। উচ্চশিক্ষা শেষ করে দেশে ফিরে বাংলাদেশ বিমানে কিছুদিন চাকরি করে লন্ডন চলে যান এবং সেখানেই থিতু হন। ১৯৮৯ সালে লন্ডনের একটি কলেজ থেকে প্রফেশনাল হিপনোথেরাপির উপর আরো একটি ডিপ্লোমা করেন। ২০০৫ সালে লন্ডনের বিশ্ববিখ্যাত হিপনোথেরাপিস্ট ইগর লেডোহস্কির হিপনোসিস ট্রেনিং অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ নেন। বর্তমানে আধুনিক হিপনোথেরাপিস্টদের গুরু মিল্টন এরিকসনের কলাকৌশলের উপর ভিত্তি করে উদ্ভাবিত এক যুগান্তকারী বিষয় ‘নিউরোলিংগুইস্টিক প্রোগ্রামিং’-এর উপর পড়াশোনা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন।

বইর নাম:  ‘হিপনোথেরাপি: সম্মোহনের মাধ্যমে চিকিৎসাপদ্ধতি’
প্রকাশক: পাণ্ডুলিপি প্রকাশনী
পরিবেশক: অঙ্কুর প্রকাশনী, বাংলাবাজার, ঢাকা।
মূল্য: ২১০ টাকা।
কুরিয়ারে পেতে চাইলে চার্জসহ ২৬০ টাকা ০১৮১৫৩৮৭৭৫৮ নাম্বারে বিকাশ করলে পাওয়া যাবে।


 নিউজটি পড়া হয়েছে ২০৭ বার  






 

ফিচার

ব্লাডি মেরি: আয়নার আড়ালের রহস্য!

স্মৃতিময় চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়-১

ইলুমিনাতি: রহস্যেঘেরা একটি গুপ্ত সংঘটন

বাংলাদেশ-সুইডেন প্রশাসনিক তুলনামূলক চিত্র

আত্মহত্যা কোনো প্রতিবাদ নয়, অপরাধ

পলাশি থেকে বত্রিশ নম্বর, বিশ্বাসঘাতকতার নির্মম ইতিহাস!

কোডেক্স গিগাস: শয়তানের বাইবেল

বিশ্বে জনসংখ্যা কমবে নাটকীয় হারে!

রক্তদান এবং নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন হোক সর্বজনীন

বিশ্বাস আপনাকে সুস্থও করবে

ফিচার বিভাগের আরো খবর






সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি:
আবদুল্লাহ আল হারুন
প্রধান সম্পাদক:
আসিফ হাসান নবী

সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. জিয়াউল হক
বিশেষ সংবাদদাতা:
র‌বিউল ইসলাম সো‌হেল

আমাদের মানচিত্র

ঠিকানা: দেওয়ান কমপ্লেক্স (৩য় তলা), ৬০/ই/১, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়:
কক্ষ নং ১৪/সি, নোয়াখালি টাওয়ার (১৪ তলা), ৫৫-বি, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০

ফোন: ০১৯১৪-৭৩৫৮৫৮, ০১৯১৪-৮৭৫৬৪০
ইমেইল: info@amadermanchitra.news, amadermanchitrabd@gmail.com

Location Map
Copyright © 2012-2024
All rights reserved

design & developed by
corporate work