ঢাকা, বাংলাদেশ  |  বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪



  বিভাগ : সাহিত্য তারিখ : ০৮-০৩-২০২২  


জাকিয়া রহমানের কবিতা: সমাজ ও সমকালের দর্পণ


  ড. রিয়াজুল ইসলাম



ড. রিয়াজুল ইসলাম: জাকিয়া রহমান একজন আবিষ্ট স্বপ্নচারী কবি ও সমাজ দ্রষ্টা। সমাজ, সভ্যতা, সমকালের আগা-পাশ-তল তিনি দেখেন শিল্প-নিরীক্ষার দৃষ্টিতে। তাই তাঁর কবিতায় সমাজচিত্র শিল্পের তুলিতে আঁকা হলে ও তা বাস্তব-বিচ্ছিন্ন নয়।  


স্বপনের চারা কবিতায় তিনি সযত্নে ও সুকৌশলে স্বপ্নের রঙিন ফুলে আশার মালা গাঁথেন। গভীরতম বোধ আর ইতিবাচক দৃষ্টিতে জীবনকে সংজ্ঞায়িত করে এবং অতিক্রম করেন দুঃখবোধ।


‌'উড়িয়ে দাও! উড়িয়ে দাও! দুঃখ যত!  
ড্যান্ডিলায়নের শুকনো বীজের মত।'


আশাজাগানিয়া অনন্য সুষমায় জীবনকে রাঙান তিনি। তারই প্রমাণ মেলে যখন তিনি লেখেন-  


'তোমার আঙিনায় একদিন।
অঙ্কুরিত হবে আবার নতুন স্বপনের চারা।'


'আদিবাসী দিবস' কবিতায় তিনি যেন গভীর ভাবে শেকড়ায়িত; নিজেকে রোপণ করেছেন  অনাদিকালের গর্ভে। মানবিক দৃষ্টিতে বিচার করেছেন সমাজ ও সভ্যতার ক্রমধারা। আদি ও আসলের মেলবন্ধন রচনার মাধ্যমে তিনি শুধু সত্যকেই অকপটে প্রতিষ্ঠা করেননি; বরং সমম্মানে যথার্থ মূল্যায়ন করেছেন আদিবাসীদের অধিকার। কলমের সুদৃঢ় খোঁচায় মুখোশ উন্মোচন করেছেন সম্পদলিপ্সু অনাচারিদের (যারা আদিবাসীদেরকে অধিকার বঞ্চিত করেছে)। জাকিয়া রহমানের নিগুঢ় সমাজ চিন্তা ও গভীর মানবিক চেতনার অনন্য প্রকাশ এই কবিতাটি।


'………………………………………
মানচিত্র এঁকেছিল নুতন করে।   
যেখানে আদিবাসীরাই অনাহূত!
এই ভূমণ্ডল হয়েছিল খন্ডিত,  
রাজনীতির ভাগ বাঁটোয়ারায়।'

'আমাদের অস্তিত্ব' কবিতাটিতে আত্মপ্রকাশে অকুণ্ঠ এই কবি মানব প্রেমের চিরন্তন স্রোতে গা ভাসিয়েছেন। আত্ম কথনের মাধ্যমে সার্বজনীন সত্যকে প্রকাশ করেছেন কাব্যিক সৌকর্যে। মানব-মানবীর অর্থবহ প্রেম ও নির্মল প্রকৃতির সম্বন্ধ তুলে ধরেছেন চমৎকার শব্দ প্রকৌশলে।


'চলে যাই দূরে, কোথাও অনেক দূরে!
দুজনে মিলে, গড়ি এক উজালা জগত।  
যেখানে আমাদের প্রেম হবে,
বিকশিত গরিমার গরবে আলোকিত।'

'ক্যালিগুলার তেষ্টা' যেন এক ক্লান্ত, বিবশ সময়ের উপাথ্যান। অন্তঃসারশূন্য, মিথ্যা আড়ম্বর পূর্ণ এক সমাজে মানবিকতা অস্তিত্বহীন প্রায়; সত্য উপেক্ষিত; সুন্দর নির্বাসিত। অনাসৃষ্টির রাহুগ্রাসে আক্রান্ত শিল্প ও সংস্কৃতি।


'…………………………………………………
সে নর্তকী ক্ষত বিক্ষত পায়ের- পরে,
যেন নাচছে, শুধু নাচছে…'

'তার শ্যামল গ্রাম, জ্ঞাতি, শষ্যক্ষেত্র-   
আগুনে উজাড় আর বিধ্বস্ত।  
চারদিকে ক্রন্দন আর আর্তনাদের-
পৈশাচিক শব্দ বলয় ভেদি,
নর্তকীর নূপুরের তান-…'


'চলে টাংগো! টাংগো!' কবিতায় কবি যেন কিছুটা শ্লেষাত্মক ও তির্যক ভঙ্গিতে দেখেছেন এক বিপ্রতীপ পৃথিবীকে। কবিতাটির পরতে পরতে আঁকা হয়েছে রাহুগ্রস্ত, যুদ্ধপীড়িত, ধ্বংস প্রায় এক বিপন্ন পৃথিবী!


'লাসের ‘পর ভন্ডের নৃত্য!
অভিনব চাতুরীর আগ্নেয়াস্ত্র,
জ্বলায় ইতিহাস আর ঐতিহ্য।  
যুদ্ধের ডঙ্গা শৈশব করে ছারখার!
সর্বহারা আর লুটেরার,
চলে টাংগো! টাংগো!'
তিনি অকুণ্ঠ আঘাত করেছেন ধর্মের লেবাসধারী  অধর্মীদের অযাচিত উপস্থিতিকেও।  
'ঐ দেখ ফুটপাতে!
দেখ- স্বর্ণ রত্নখচিত মন্দির কি মসজিদে।
ভিক্ষার পাত্র সমুখ দুয়ারে
ভরে দেয় শয়তানে।'


জাকিয়া রহমানের প্রতিটি কবিতায় তাঁর সমৃদ্ধ মেধা ও মননের ছাপ স্পষ্ট। তাঁর সুগভীর সমাজ চিন্তা ও সমকাল চেতনা বিশেষ ভাবে লক্ষণীয়। তাঁর জন্যে অনেক অনেক শুভ কামনা।


ড. রিয়াজুল ইসলাম
প্রভাষকঃ আলবুখারি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, মালয়েশিয়া


 নিউজটি পড়া হয়েছে ৬৫০ বার  






 

সাহিত্য

‘জার্মানির যত সূর্যকন্যা: হিলডেগার্ড ফন বিঙ্গেন থেকে ফ্রেডেরিকে অটো’

একগুচ্ছ কবিতা

শিক্ষা

কথা দিলাম

জাকিয়া রহমানের একগুচ্ছ কবিতা

বিটবুর্গ রহস্য-৩

বিটবুর্গ রহস্য-২

বিটবুর্গ রহস্য-১

আস্ট্রিদের পিপ্পি ও সুইডিশ-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক

সময়

সাহিত্য বিভাগের আরো খবর






সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি:
আবদুল্লাহ আল হারুন
প্রধান সম্পাদক:
আসিফ হাসান নবী

সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. জিয়াউল হক
বিশেষ সংবাদদাতা:
র‌বিউল ইসলাম সো‌হেল

আমাদের মানচিত্র

ঠিকানা: দেওয়ান কমপ্লেক্স (৩য় তলা), ৬০/ই/১, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়:
কক্ষ নং ১৪/সি, নোয়াখালি টাওয়ার (১৪ তলা), ৫৫-বি, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০

ফোন: ০১৯১৪-৭৩৫৮৫৮, ০১৯১৪-৮৭৫৬৪০
ইমেইল: info@amadermanchitra.news, amadermanchitrabd@gmail.com

Location Map
Copyright © 2012-2024
All rights reserved

design & developed by
corporate work