ঢাকা, বাংলাদেশ  |  বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪



  বিভাগ : সাহিত্য তারিখ : ০২-১২-২০২১  


আস্ট্রিদের পিপ্পি ও সুইডিশ-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক


  লিয়াকত হোসেন



লিয়াকত হোসেন: পিপ্পিকে চেনেনা এমন কাউকে আর যাই হোক সমগ্র সুইডেনে খুঁজে পাওয়া যাবেনা। শুধু সুইডেন কেন, সমগ্র স্ক্যান্ডেনিভিয়ায়ও খুঁজে পাওয়া দুস্কর হবে। সুদূর রাশিয়া, আমেরিকা, জাপান, জার্মান বাংলাদেশসহ অনেক দেশই পিপ্পিকে চেনে।

পিপ্পির বয়েস মাত্র বার।

বয়সের তুলনায় একটু হালকা পাতলা। গ্রামের বাড়ি ভিল্লেকুল্লা কুটিরে একাই থাকে, একাই রান্না বান্না করে। কোন কোন সময় একা একাই বনে বাঁদারে ঘুরে বেড়ায়। পিপ্পির মা নেই তবে বাবা আছেন, তিনি আবার জাহাজের ক্যাপ্টেন। সাগরে সাগরে জাহাজ নিয়ে তাকে ঘুরে বেড়াতে হয়, মাঝে মধ্যে বাড়ি আসেন আবার ফিরে যান সাগরে। তাই পিপ্পি একা তবে পাশের বাড়ির আনিকা ও আনিকার ভাই টমি তার বন্ধু। প্রায় সময় তারা তিনজনা বন জংগল চষে বেড়ায়। কাঠবেড়ালির পেছনে দৌঁড়ায়। এভাবেই দিন যায়।

আনিকা আর টমি যখন স্কুলে চলে যায় তখন পিপ্পিকে একা থাকতে হয়।

তবে একেবারে একা নয় ঘোড়া আর বাঁদরের পেছনে সময় দিতে হয়। পিপ্পির একটি বাঁদর একটি ঘোড়া আছে। বাঁদরের নাম মি. নিলসন আর ঘোড়ার নাম...। নিলসন সারাদিন দুষ্টুমি করে বেড়ায়, ঘরের জিনিসপত্র নষ্ট করে এসব পিপ্পিকে সামলাতে হয়। তারউপর ঘোড়া, তাকেও ঘাস টাস কেটে খাওয়াতে হয়। তাই পিপ্পির সময় কোথায় স্কুলে যাবার? গ্রামের লোকজন সেটা বোঝে তাই তারাও পিপ্পিকে স্কুলে যেতে বলেনা।

 

নিলসন আর ঘোড়া পিপ্পির সঙ্গেই থাকে।

বাড়ির ভেতর একই ঘরে থাকে, মাঝে মধ্যে ঘোড়াকে কাঁধের উপর উঠিয়ে বারান্দায় রেখে আসতে হয়। পিপ্পিই সেটা করে। দুহাতে কাঁধের উপর তুলে বারান্দায় রেখে আসে। পিপ্পির অনেক শক্তি, তাই তার কোনো অসুবিধে হয়না।

 

অনেক আগে পিপ্পির বাবা পুরানো বাড়ি ভিল্লেকুল্লা কিনেছিলেন।

অবসরের পর পিপ্পিকে নিয়ে গ্রামেই বাস করবেন। কিন্তু একদিন সমুদ্র ঝড়ে জাহাজ উড়িয়ে নিয়ে গেল আর পিপ্পি ফিরে এলো। ফিরে আসার সময় জাহাজ থেকে পিপ্পি দুটি জিনিস এনেছিলো, মি. নিলসন ও এক বস্তা স্বর্ণমুদ্রা। ভিল্লেকুল্লায় ফিরেই ঘোড়া কিনে ফেলে। সেই থেকে মি. নিলসন, ঘোড়া আর পিপ্পি বাবার ফেরার অপেক্ষায়।

জাহাজ ছেড়ে আসার সময় বাবার সহকর্মী বন্ধু ও নাবিকেরা পিপ্পিকে বলেছিলো, ‘এক অসাধারণ মেয়ে’।

পিপ্পি আসলেই অসাধারন। ভিল্লেকুল্লায় ফিরে পরদিন ভোরেই দেখা গেলো পিপ্পি প্রাত:ভ্রমণে বেরিয়েছে। মাথার চুল গাজরের মত একই রঙ্গের, বিনুনি করা দুপাশে দুটি বিনুনি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ছোট আলুর ন্যায় নাকে তামাটে ফোটা ফোটা দাগ। নাকের নিচেই সাদা ও সতেজ দাঁত ও প্রশস্ত মুখ। পরনের জামাটিও অসাধারণ, পিপ্পি নিজে বানিয়েছে। জামাটি নীল হবার কথা ছিলো, কিন্তু নীল কাপড় পর্যাপ্ত না থাকায় এখানে সেখানে লাল কাপড়ের টুকরো জোড়া দেয়া। লম্বা সরু দু’পায়ে জোড়া মোজা, একপায়ে বাদামি অন্য পায়ে কালো। কালো এক জোড়া জুতা বিঘত লম্বা। জুতা জোড়া বাবাই কিনে দিয়েছিলেন দক্ষিণ আমেরিকা থেকে, বড় হলে পরবে কিন্তু পিপ্পি অন্য কিছু পরতে চাইতো না।

পিপ্পির কাঁধে নিল প্যান্ট, হলুদ জ্যাকেট ও মাথায় সোলার টুপি পরা এক বানর।

অসাধারণ মেয়েটি গ্রামের রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলো। আর গ্রামজুড়ে হৈচৈ শুরু হলো। সাড়া পরে গেল চারদিক, গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে।

পত্রপত্রিকাগুলোও পিপ্পিকে নিয়ে লেখালেখি শুরু করলো। লেখিকা আস্ট্রিদ লিন্দগ্রেন পিপ্পিকে নিয়ে একে একে লিখে ফেললেন তিনটি বইয়ের এক সিরিজ। সাড়া পরে গেল সমগ্র সুইডেনে। সাড়া পরে গেল স্ক্যান্ডিনেভিয়ার দেশগুলোতে। ছোট ছোট মেয়েরা পিপ্পির অনুকরণে চুল রাঙ্গিয়ে ফেললো, বেণির প্যাটার্ন পরিবর্তন হয়ে গেল। পিপ্পিকে নিয়ে নাটক, সিনেমা তৈরি হলো। দেশের বিভিন্ন জায়গায় স্ট্যাচুও বানানো হলো, অবশেষে সুইডিশ ডাক বিভাগ পিপ্পিকে নিয়ে ডাক টিকেটও বের করলেন।

আমি তখন স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার ফাঁকে ফাঁকে পিপ্পির কথা কানে এলো। কানে না এসেই পারেনা, কারণ পিপ্পিকে আবাল বৃদ্ধ বনিতা বালক বালিকা সবাই চেনে। সবাই জানে। পিপ্পির উপর পত্র-পত্রিকায় কিছু লেখা পড়ে ফেললাম। লাইব্রেরি থেকে নিয়ে আস্ট্রিদের তিন খন্ড পিপ্পি পড়ে ফেলাম। পড়ে মনে হল আসলেই পিপ্পি এক অসাধারন মেয়ে, জাহাজের নাবিকেরা মিথ্যে বলেনি।

 

পিপ্পি স্ট্যাচু এদিক সেদিক দেখা গেলেও বাস্তবে নেই।

বাস্তবে পিপ্পি বলে কেউ নেই। পিপ্পি লেখিকা আস্ট্রিদের তৈরি এক চরিত্র। এক অসাধারন মেয়ের অসাধারন চরিত্র। এমন সাড়াজাগানো চরিত্র পৃথিবীতে আর হয়তো নেই। ভেবে দেখলাম এই অসাধারন চরিত্রটিকে নিয়ে না লিখলে হয়তো অনেক কিছুই লেখা হবেনা। তাই বিশ্ববিদ্যালয় ও কর্ম জীবনের ফাঁকে ফাঁকে পিপ্পির বইগুলো বাংলায় অনুবাদ করার প্রেরণা জাগে। বাস্তবে পিপ্পি নেই তবে পিপ্পি রয়েছে ঘরে ঘরে, বিশ্বজুড়ে।

তাই লেখিকা Johanna Hurwitz বলেছেন, `there is always a place on the globe where it is daytime. There is always a place where children are reading the book of Astrid Lindgren.'

 

সুইডিশ-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক

সুইডেন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় ১৯৭১ সালে। সুইডেন-বাংলাদেশের Bilateral বা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ৫০ বছরের। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক শুধু রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক দিক দিয়েই বিবেচ্য নয়; দুটি দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে সাহিত্য সংস্কৃতি ক্রীড়া বিশেষ ভূমিকা পালন করে ও সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়তা করে। সুইডিশ সাহিত্যের বাংলা অনুবাদ অথবা বাংলা সাহিত্যের সুইডিশ অনুবাদে সাহিত্যের আদান প্রদান দুদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের সহায়ক। এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।

সুইডেনের বিখ্যাত লেখিকা আস্ট্রিদ লিন্দগ্রেন, সেলমা লগারলফসহ অন্য কয়েকজনের বিখ্যাত বই বাংলায় অনুবাদ করেছিলাম। বইগুলো সুইডেন ও বাংলাদেশের বিভিন্ন লাইব্রেরিতে পাওয়া যায়। আস্ট্রিদের পিপ্পিলংস্ট্রুম, লত্তা, এমিল, জনাথন বাংলাদেশর শিশুদের কাছে খুবই পরিচিত। সাহিত্যে নবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখিকা সেলমা লগারফের নিলস হলগেরসনের সুইডেন ভ্রমণ বইয়ের নিলস বাংলাদেশের শিশু-কিশোরদের কাছেও ব্যাপকভাবে পরিচিত। বইগুলো দ্বিপাক্ষিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখছে এবং ভবিষ্যতেও রাখবে।

পাশাপাশি সম্প্রতি প্রকাশিত লেখক আনিসুল হক লিখিত ও কামরুল ইসলাম ও Eivor Briscoe কর্তৃক বিখ্যাত ‘মা‘ বইটির সুইডিশ অনুবাদ Frihetens Mor বাংলাদেশ-সুইডিশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে বিশাল ভূমিকা রাখবে। মুক্তিযুদ্ধ ও সত্য ঘটনা নিয়ে লেখা উপন্যাস হিসেবে এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত এক নিঃসঙ্গ ‘মা‘কে নিয়ে লেখা উপন্যাস হিসেবে আনিসুল হকের বইটি যেকোন সময়ের একটি প্রধান উপন্যাসের মর্যাদা লাভ করবে এবং সুইডিশে অনুদিত বই Frihetens Mor সুইডিশ পাঠক-পাঠিকাদের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে জানতে ও উপলব্ধি করতে সহায়ক হবে এবং সুইডিশ অনুবাদ সাহিত্যে Frihetens Mor এক উল্লেযোগ্য সংযোজন হিসেবে বিবেচিত হবে।

স্টকহোম, সুইডেন

১৯-১১-২০২১


 নিউজটি পড়া হয়েছে ৫৮০ বার  






 

সাহিত্য

‘জার্মানির যত সূর্যকন্যা: হিলডেগার্ড ফন বিঙ্গেন থেকে ফ্রেডেরিকে অটো’

একগুচ্ছ কবিতা

শিক্ষা

কথা দিলাম

জাকিয়া রহমানের কবিতা: সমাজ ও সমকালের দর্পণ

জাকিয়া রহমানের একগুচ্ছ কবিতা

বিটবুর্গ রহস্য-৩

বিটবুর্গ রহস্য-২

বিটবুর্গ রহস্য-১

সময়

সাহিত্য বিভাগের আরো খবর






সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি:
আবদুল্লাহ আল হারুন
প্রধান সম্পাদক:
আসিফ হাসান নবী

সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. জিয়াউল হক
বিশেষ সংবাদদাতা:
র‌বিউল ইসলাম সো‌হেল

আমাদের মানচিত্র

ঠিকানা: দেওয়ান কমপ্লেক্স (৩য় তলা), ৬০/ই/১, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়:
কক্ষ নং ১৪/সি, নোয়াখালি টাওয়ার (১৪ তলা), ৫৫-বি, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০

ফোন: ০১৯১৪-৭৩৫৮৫৮, ০১৯১৪-৮৭৫৬৪০
ইমেইল: info@amadermanchitra.news, amadermanchitrabd@gmail.com

Location Map
Copyright © 2012-2024
All rights reserved

design & developed by
corporate work