জাকিয়া রহমানের একগুচ্ছ কবিতা
স্বপনের চারা
উড়িয়ে দাও! উড়িয়ে দাও! দুঃখ যত!
ড্যান্ডিলায়নের শুকনো বীজের মত।
গুঁজে দিও শ্বেত রেশমি কেশে তার,
তোমার কিছু ইচ্ছা মালা আশার।
যে মালাতে ছুঁয়েছিল,
ব্যর্থতার কুঞ্চিত আক্ষেপের দীর্ঘশ্বাস।
বাতাসের নির্মল কোমল পরশ হয়তো,
সে মালা ছুঁয়ে ছুয়ে-
আবার সতেজ আঙ্গিকে
আনবে নতুন করে বাঁচার আশ্বাস।
সাজিয়ে আক্ষেপেরে সব ভগ্নাংশ পাপড়ি পূর্ণতায়।
দেবে নতুন করে স্বপ্ন দেখার অভিপ্রায়।
ফিরিয়ে দেবে, ফিরিয়ে দেবে আবার
সুমলয়ে গা ভাসিয়ে আবার আসবে হয়তো-
তোমার আঙিনায় একদিন।
অঙ্কুরিত হবে আবার নতুন স্বপনের চারা।
দুঃখের জ্বালা মূর্তি অদৃশ্য হবে তখন মস্তক করে আনত।
আদিবাসী দিবস
(৯ আগস্ট, ২০২১ আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে লিখিত)
শোন, কিছু কথা আদিবাসীদের নিয়ে!
সবাই নাকি মানছে আজকে
আদিবাসীদের দিবস!
প্রহসন করে নাকি অনুতপ্ত হৃদে-
যেটা ছিল এতোদিন বিবস?
ফিরল কি মনুষত্ব?
কে আদি আর কে করল দখলদারি?
দেখছি যেন নাটক কৌতুকের-
হাসব কি কাঁদব ভেবে পাইনি।
একি উপহাস ছিল তাদের ভাগ্যে!
এসেছিল ঘোড়া চড়ে- তলোয়ার হাতে,
ছিনতাইকারী আদিকালে, আদিবাসীর বসতি।
ছেই ছেই করে খেদিয়ে তাদেরে,
নেড়িকুকুরের মত।
মানচিত্র এঁকেছিল নুতন করে।
যেখানে আদিবাসীরাই অনাহুত!
এই ভূমণ্ডল হয়েছিল খন্ডিত,
রাজনীতির ভাগ বাঁটোয়ারায়।
তাই মনে হয়, খুব হাসির কথাই!
সব কেড়ে নিয়ে, ভূমির অধিকারী-
হল সর্বহারা, নিঃস্ব যত আদিবাসী।
আদিকালে ওরাই ছিল বাসিন্দা!
প্রকৃতির কোল থেকে কেড়ে নিয়ে,
করেছিল উৎখাত অত্যাচারীরা।
কত অনাচার আর অবিচার হল,
সরল সহজ আদি মানুষের প্রতি।
এখন সত্যিই কি অনুতপ্ত অত্যাচারীরা?
ব্যানার লাগিয়ে দয়া দেখাবার প্রচেষ্টা!
সব কেড়ে নিয়ে করে আজ পালন,
আদিবাসী দিবস পালনের হাঙ্গামা!
আমাদের অস্তিত্ব
দিগন্তে ছেয়ে যখন নতুন আশা পাখা মেলেছিল-
তুমি বলেছিলে,
চলে যাই দূরে, কোথাও অনেক দূরে!
দুজনে মিলে, গড়ি এক উজালা জগত।
যেখানে আমাদের প্রেম হবে,
বিকশিত গরিমার গরবে আলোকিত।
আমি বলেছিলাম তার চেয়ে চলো! দূরে কোথাও-
শ্যামল কোন বনবীথির ছাওনিতে,
কিংবা বনের ধারে নির্জনে।
গড়ে তুলি অনুপম এক শান্তির নীড়!
যেখানে কোমল বাতাস খেলে বেড়ায় নিত্যদিন,
অজস্র আনন্দের স্রোতে।
ভেসে বেড়ায় প্রজাপতি আর যত মধুপেয়
খুনসুটি করে নেচে বেড়ায় ফুলে ফুলে।
আর সেখানে ফুলের সুবাসে মহিত
আমাদের দুজনের মন হবে বিমোহিত,
শ্রমের ক্লান্তি ভুলে দুটি সুফলা বৃক্ষের মত।
আমাদের জীবন জ্যোতি,
যেন নীল আকাশে হয়ে আলোর অর্ঘ্য
সার্থক করবে আমাদের অস্তিত্ব।
ক্যালিগুলার তেষ্টা
সভ্যতা তুমি জন্ম দিলে কাকে?
আজ যদি ভেসে আসে দূর থেকে-
কোন বাঁশীর সুর বাতাসে,
আমার রক্তের স্রোতে-
রোমাঞ্চ জাগবে কি?
আমার হৃদপিন্ড আবেগে মেতে,
আমি রাধা নই যদিও-
ভাববে কি তবুও?
মানসের কৃষ্ণের কথা!
নাকি মনে হবে ওই দূরে-
কোন ক্যালিগুলা তান তুলেছে,
কোন রূপসীর নূপুরের বোল শুনতে।
নাকি তার মৃত্যু যাতনা উপভোগ করতে?
সে নর্তকী ক্ষত বিক্ষত পায়ের- পরে,
যেন নাচছে, শুধু নাচছেৃ
ক্যালিগুলার তৃষ্ণা মেটাতে।
তার শ্যামল গ্রাম, জ্ঞাতি, শষ্যক্ষেত্র-
আগুনে উজাড় আর বিধ্বস্ত।
চারদিকে ক্রন্দন আর আর্তনাদের-
পৈশাচিক শব্দ বলয় ভেদি,
নর্তকীর নূপুরের তান-
পারবে কি করতে?
ক্যালিগুলার তেষ্টা নিবৃত্ত?
সভ্যতা তুমিও তাই ক্যালিগুলার মত,
আত্যাচারীতে হয়েছ পরিণত।
সভ্যতা তোমার সংকল্প ছিল,
উন্নত উদার মনের মানুষের ভিড়-
করে দেবে আঁধার নিখিল আলোকিত।
কিন্তু জন্ম দিলে নিম্নমনা অত্যাচারীর
আমাদের বিনাস,
তাদের পাশবিক অভিলাষ।
আত্মতুষ্টি হবে কি অত্যাচারীর?
চলে টাংগো! টাংগো!
কত রঙ মেখে- বেহুদা পোশাকে,
সং সাজে! সং সাজে !
চলছে প্রেম, কি মানবতার ভরং পাঠ,
দুনিয়াটা ব্যাপারীদের হাট।
সত্য আর মিথ্যার-
চলে টাংগো! টাংগো!
কোন লাজ নেই, আক্ষেপ নেই,
জোচ্চোর যত, ঠগেরা নিরলস-
দিব্যি ডাকাতি, চলে দিনরাতি
হোকনা বিধ্বস্ত- হোকনা ধ্বংশ,
এ জগত কি মানব গোষ্ঠি।
সমৃদ্ধি আর নিঃস্বতার,
চলে টাংগো! টাংগো!
পল পলে গড়া,
ফলবতী ধরা, অপূর্ব উর্বরা,
বেমানান দূষনে হোকনা-
নিমজ্জিত বিবসনা।
নেই কোন ধিক্কার,
লোভ-লিপ্সার সাথে প্রকৃতির
চলে টাংগো! টাংগো!
লাসের ‘পর ভন্ডের নৃত্য!
অভিনব চাতুরীর আগ্নেয়াস্ত্র,
জ্বলায় ইতিহাস আর ঐতিহ্য।
যুদ্ধের ডঙ্গা শৈশব করে ছারখার!
সর্বহারা আর লুটেরার,
চলে টাংগো! টাংগো!
ঐ দেখ ফুটপাতে!
দেখ- স্বর্ণ রত্নখচিত মন্দির কি মসজিদে।
ভিক্ষার পাত্র সমুখ দুয়ারে
ভরে দেয় শয়তানে।
স্বর্গে বসবাসের টিকেট কেনে।
ধনকুবের আর ভিখারির!
চলে টাংগো! টাংগো!