এ, বি, এম ফয়েজ উল্লাহ
'The miracle of the Holy Qoran in the field of rhyme and prosody' নামে আমার লেখা একটি প্রবন্ধ পাঠ করেছিলাম কুয়েতের 'Writers guild' এর অনুষ্ঠানে। এই অনুষ্ঠানে আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ইরান, পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, কুয়েত, সৌদী আরব, ইন্দোনেশিয়াসহ ১৫টি দেশের রাষ্ট্রদূত, কবি, সাহিত্যিক, গবেষক, সাংবাদিক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। আমার ঐ প্রবন্ধে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছিলাম যে পৃথিবীর সব দেশের সব ভাষার কবিই তাদের কবিতার ছন্দপ্রকরণ,পঙ্ক্তিমালা ও অন্তানুপ্রাস বা অন্তমিল পাক কোরানের সূরাসমুহের ছন্দ, পঙ্ক্তিসংখ্যা ও অন্তমিলের অনুকরণ, অনুসরণে তৈরি করেছেন। অতীত ও আধুনিককালের ছান্দসিক, গবেষক এবং কবিবৃন্দ নানান নামে, বিচিত্র ঢঙ্গে যেসব কবিতা লিখেছেন বা লিখছেন তার মূল উপকরণ আল-কোরান থেকে সংগৃহিত।
আল-কোরান জগত-প্রভু মহান স্রষ্টা পরম করুণাময় আল্লাহর অমিয় বাণী। একাধারে সাহিত্য, মহাকাব্য, বিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ভূগোল, বিজ্ঞান, দর্শনশাস্ত্র, সমরশাস্ত্র, ইতিহাস, এনসাইক্লোপিডিয়া অফ ল, অর্থশাস্ত্র ও পৌরবিজ্ঞান, ধর্মশাস্ত্র-তথা পৃথিবীর সব বিদ্যার, সর্বজ্ঞানের একমাত্র মহাগ্রন্থ। এটি সৃষ্টি-শ্রেষ্ঠমানবের (খলিফাতুল্লাহ) সর্ববিদ শাস্ত্র শিক্ষা ও কল্যাণের আধার একমাত্র মহাগ্রন্থ। জগদ্বিখ্যাত বৈজ্ঞানিকেরা আজ মানতে বাধ্য হয়েছেন যে আল-কোরানের চেয়ে বড় বিজ্ঞানগ্রন্থ আর নেই। আল-কোরান, বিজ্ঞানময় অলৌকিক মহাগ্রন্থ। মনুষ্য আবিষ্কৃত পৃথিবীর আজকের সমস্ত শাস্ত্রের মূল উৎসস্থল আল-কোরান। বর্তমানে সকল দেশের, সকল ভাষার সকল সাহিত্যের উন্নতির মূলেও রয়েছে আল-কোরানেরই অবদান। পয়ার থেকে শুরু করে সনেটতক; যা দশম শতাব্দি থেকে একবিংশ শতাব্দির ১ দশকে এসে চরম উৎকর্ষতা লাভ করেছে, তার উৎসভূমিও আল-কোরান।
‘আল-কোরান’ মহান আল্লাহর বাণী। সুতরাং এতে ব্যবহৃত আরবী ভাষা রাব্বুল আলামিন আল্লাহরই পাক ভাষা। তাই এই ভাষা যে সর্বপ্রথম ভাষা, সুপ্রাচীন, আদি এবং অকৃত্রিম, এতে সন্দেহের অবকাশ নেই। সৃষ্টির প্রথম মানব হযরত আদম (আ:)কে যে ভাষা শিক্ষা দেয়া হয়েছিল-তা আরবী। ইমাম আবু মনসুর মুহাম্মদ ইবনে আহমদ আল-আজহারী লিখছেন, ‘মানুষের দুনিয়াতে আগমনের পূর্বেই আল্লাহতায়ালা হযরত আদম (আ:)কে আরবী ভাষা শিক্ষাদানের মাধ্যমে এ ভাষার সূচনা করেন। আরবী ভাষা যে সবচেয়ে প্রাচীন তার অকাট্য প্রমাণ হলো, পবিত্র কোরানের ভাষা আরবী। কোরান যেহেতু অনাদিগ্রন্থ, তাই এর ভাষাও অনাদি।
আধুনিককালের ভাষাবিদ ও প্রত্নতাত্তিক গবেষকদের গবেষণায় এ ‘ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে যে, প্রায় পাঁচ হাজার বছর পূর্বে মধ্য এশিয়ায় একটি সুসভ্য জাতি বাস করতো। তারা হযরত আদম (আঃ)-এর ভাষা তথা আরবী ভাষায় কথা বলতো। ‘আল-কোরানে হযরত আদম (আঃ) ও হযরত হাওয়া (আঃ) মিলনের স্থান ‘মক্কা’কে নির্দিষ্ট করে বলা হযেছে,‘উম্মুল কুরা’। অর্থাৎ সকল দেশের উৎস, জননী এই মক্কা। পৃথিবীর আদী বসতি। এদের মাতৃভাষা ছিল ‘আরবী’-যা হযরত আদম’র (আঃ) ভাষা। এ্ ভাষাই ‘ইন্দো-ইউরোপিয়ান’,‘কেন্তম’ (Centum) শতম (Satam) নামে পৃথিবীর নানান দেশে নানান ভাষা-শাখার জন্ম দেয়। সুতরাং বলার অপেক্ষা রাখেনা যে ‘কেন্তম’,’শতম’র জন্মদাত্রী ভাষার মূল আরবী ভাষা। আর ‘শতম’র ‘ইন্দো-ইরানীয়ান’ ভাষার ধারাবাহিক ও বিবর্তিত, পরিবর্তিত, রূপ আজকের ইরান, পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশের প্রচলিত সব ভাষা।
সুতরাং কোরান হাদীসের আলোকে এই অভিমত অকাট্য প্রমাণ করে যে আরবী ভাষাই হলো সর্বপ্রথম ও সর্বপ্রাচীন। মহান আল্লাহ তায়ালা আরবী ভাষায় কোরান নাজিল করায় এই ভাষার মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়েছে। এই ভাষায় বহিরাগত শব্দসমষ্টি প্রবেশ করতে না পারায় এর বিশুদ্ধতা প্রশ্নাতীত। জনৈক ফরাসী দার্শনিকের মতে,’আল-কোরান ভাষাবিদদের জন্য একটি শব্দকোষ, কবিদের জন্য একটি কাব্যগ্রন্থ’। ‘অতুলনীয় সাহিত্যগুনে কোরান পরিপূর্ণ। কোরানের কাব্যময়তা, গদ্যশৈলী, উপমা, রূপক, উচ্চভাষার সাহিত্যমূল্য ও বর্ণনার অপরসীম সমৃদ্ধতা চিরসত্য। কোরান শুধুমাত্র দর্শন নয়; সাহিত্যও বটে। কোরানের ভাষার কাব্যধর্মিতা, ছন্দমহীমা ও অন্তমিল অতুলনীয়, অসৃজনীয়’ (মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ)। প্রজ্ঞাময় আল্লাহতায়লা অনুপম ছন্দ-সৌকর্যে যে বিজ্ঞানময় মহাকাব্য মহাগ্রন্থ আল-কোরান তার প্রিয় হাবিব হযরত মোহাম্মদ (দঃ)-এর মাধ্যমে তার সৃষ্ট মানবের প্রতি প্রেরণ করেছেন, তার তুলনা আর দ্ধিতীয়টি নেই।
পৃথিবীতে ইসলাম ধর্মের আগমনের বা প্রবর্তনের পূর্বের যে আরব ও আরবীয়দের নিয়ে আজকের সভ্যজগত ব্যঙ্গ করে এবং সে যুগকে ‘অন্ধকার যুগ’ ও ‘বর্বর’ আখ্যায়িত করে থাকে; সেই আরবীরা তখন কাব্যে, সাহিত্যে এতোটাই উন্নতি করেছিলেন যে পৃথিবীর কোন দেশ ও জাতির জন্য তা ছিল কল্পনারও অতীত। আরবে তখন কবিতার স্বর্ণযুগ। ৬১০ খ্রিষ্টাব্দ সময়কাল থেকে আল-কোরান নাজিল হতে থাকলে কোরানের ছন্দ, পঙ্ক্তি-প্রকরণ, শব্দচয়ন, অনুপ্রাস এবং অন্তানুপ্রাস ইত্যাদি অবলোকন করে তৎকালিন আরবের কবিকূল শ্রেষ্ঠ্ররাও বিস্ময়ে হতবাক হয়েছিলেন। ‘আরবি ভাষায় আল্লাহর নাজিলকৃত মহাগ্রন্থ আল-কোরান যেমন মানবজাতির পূর্ণাঙ্গ জীবন-বিধান, তেমনি এর শব্দ-বিন্যাস, বাক্য-গঠন প্রণালী, তাৎপর্যপূর্ণ প্রয়োগ-বিধি, ঊপমা, ছন্দ, বিশিষ্টাত্মক শব্দ, লালিত্যময়তা সবকিছু মিলিয়ে এ এক অপূর্ব গ্রন্থ। এ আসমানী গ্রন্থ আরবী সাহিত্যের অদৃষ্টপূর্ব মডেল। অর্দ্ধ-পৃথিবীর শাসক আরবেরা যে প্রান্তে বিজয় লাভ করেছে, মহাগ্রন্থ আল-কোরান তাদের সংগে গেছে। বিশ্বের এক বিস্তৃত ভূখণ্ডে আরবী দৈনন্দিন ভাষায পরিণত হযেছে। অনারবেরা মুসলমান হওয়ার সাথে সাথে আরবী ভাষাকেও গ্রহণ করে নিয়েছে। আবার সেসব দেশের অমুসলিমেরাও আরবী ভাষাকে আপন করে নিয়েছে। ফলে সেখানকার ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও জীবনাচারে আল-কোরানের প্রভাব প্রভূতভাবে পড়েছে। মুসলিম, নাসারা, খৃষ্টান, পৌত্তলিক-মুশরিক, তুর্কি, ফার্সিকেরা আল-কোরানের শব্দ, ভাব, কাহিনী, বিষয়, বর্ণনা, রূপক, উপমার আদলে তাদের নিজ নিজ ভাষাকে উন্নত করেছেন। কাব্য সৌন্দর্য বর্ধিত করেছেন।
ফলে, পৃথিবীর সব ভাষার আধুনিক কাব্য-কবিতায় অনুপ্রাস, অন্তানুপ্রাস, ছন্দ,পঙ্ক্তি-প্রকরণ, পদপ্রকরণ এবং পয়ার (coplet or Distich), ত্রিপদি (Triplet), চতুস্পদি (Quatrain), পঞ্চম, ষড়পদি বা ষটক (Sestette), সপ্তম,অষ্টপদি বা অষ্টক (octav)---চতুর্দশপদি sonnetসহ লিমেরিক, ক্লারিহিউ, হাইকু, তানাকা ইত্যাদি যতপ্রকারের কবিতা আজ ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় ভিন্ন ভিন্ন দেশে প্রচলিত আছে, সেসবের উদ্ভবের উৎস যে আল-কোরান তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। ভাষা, কবিতা ও ছন্দের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে; আজ থেকে পনেরশত বছর পূর্বে আল-কোরান ছাড়া পৃথিবীর কোন ভাষায় উপরিউক্ত নামে বা ছন্দে বা স্টাইলে কোন কবিতা লিখা হয়নি। তার প্রধান কারণ, ৬০০ খৃষ্টাব্দেও যখন আরবে কাব্য কবিতার স্বর্ণযুগ তখন পুরো বিশ্বে কবিতার ‘অন্ধকার’ যুগ।
ছন্দ-শাস্ত্রির কাজ হচ্ছে অনুপম মহাকাব্যের রূপ নির্মাণে তার ছন্দ-সংজ্ঞাসূত্র নির্ধারণ ও আবিষ্কার করা। মনে রাখা দরকার, একটা ভাষার কবিতা যখন সুগঠিত রস রূপ লাভ করে, তখনই তার গঠনতত্ত আবিষ্কারের সময় আসে। অষ্টম শতাব্দিতে খলীল বিন-আহাম্মদ যে আরবী ‘ছন্দ-বিজ্ঞান’ আবিষ্কার করেছিলেন তার প্রধান কারণ, সেসময় আল-কোরানের মাধ্যমে আরবী কবিতা একটা পরিণত রূপ লাভ করেছিল।
রহমতাল্লীল আলামিন রাসূলে করিম হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (দ:)-এর উপর সর্বপ্রথম নাজিলকৃত প্রজ্ঞাময়-আল্লাহর বাণী এক অনন্য (দ্বিপদি বা দ্বিপঙ্ক্তি বা পয়ার বা coplet.
‘ইকরা বিসমে রাব্বিকাল্লাজি খালাক,
খালাকাল ইনসানা মিন আলাক’
অনুবাদ;-‘পাঠ কর নিজ প্রভুর নামে, স্রষ্টা যে জন,
করেছেন যিনি ঘন সে শোনিতে মানব সৃজন’-(কাজী নজরুল)
কোরআন শরীফের সমিল পদ্যভঙ্গী ও গদ্যভঙ্গী অনুসরণ করে আরবী ভাষায় প্রথম ‘মকামাহ’ (Assemblies) লেখেন বদিয়ল জামান আল-হামসানী (৯৬৯-১০০৭ কাশিম আল-হারিরি (১০৫৪-১১২২ খ্রী.) প্রণয়ন করেন পঞ্চাশটি ‘মাকামাত’। ঊল্লেখ্য, আল্লার হাবিব রাসূলে করিম (দঃ) নিজে সত্যভাষী, সুন্দর কবিতা ভালোবাসতেন। খলিফা হযরত উমর (রাঃ) ও হযরত উসমান (রাঃ) কবিতার সমজদার ও লেখক ছিলেন। হযরত আলী (রাঃ) ছিলেন আরবী সাহিত্যের বড় পণ্ডিত। তাঁর কবিতা সংকলন ‘দিভানে আলী’ নামে খ্যাত। হযরত ফাতেমা (রাঃ) অনন্য মহিলা কবি ছিলেন। সাহাবা-এ-কেরামদের মধ্যেও বহু খ্যাতিমান কবি ছিলেন।
‘মাকামাত’র মূল নিদর্শনের উপমায় নিম্নে আল-কোরান’র (৬১০-৬৩৩ খৃষ্টাব্দ) তিনটি ক্ষুদ্রায়তন সূরা উদ্ধৃত করা গেল;-
সূরা কাওছার
ইন্না আ’তয়াইনা-কাল কাওছার।
ফাছাল্লিলি-রাব্বিকা ওয়ানহার।
ইন্না শা-নিয়াকা হুয়াল আবতার।
আরবী ‘সালসা’ বর্তমানের আধুনিক বিশ্ব সাহিত্যের ইংরেজি Triplet, জাপানি Haiko, বাংলার ত্রিপদি বা ত্রিপঙ্ক্তির কবিতা। মূল উৎপত্তিস্থল আল-কোরানের সূরা ‘কাওছার’।
আর ‘সূরা ইখলাছ’ থেকে চতুষ্পদি (রুবাঈ) কবিতার যাত্রা;-
‘কূল হুয়াল্লা-হু আহাদ
আল্লাহুস সামাদ
লাম ইয়ালিদ ওয়ালাম ইউলাদ
ওয়ালাম ইয়াকূল-লাহু,কুফুয়ান আহাদ’।---এর আদলে
ইরানের মহাকবি শেখ সাদী লেখেন
‘বালাগাল উলা বি-কামালিহি
কাশাফাত তুজা বি-জামালিহি
হাসুনাত জামিও খিছালিহি
সাল্লু আলাইহি ওয়ালিহি’।
আধুনিক বাংলার চতুষ্পদি বা চৌপদি বা চৌপঙ্ক্তি, ইংরেজি Quatrain আর ফারসী রুবাই ইত্যাদির উৎসভূমিও আল-কোরানের সূরা এখলাছ। এই সূরাকে কেন্দ্র করেই ইরানের মহাকবি হাফিজ, শাদী, ওমর খৈয়ামেরা বিখ্যাত সব রুবাই রচনা করেন। তবে ফারসী রুবাঈ‘র যে ঢং (ককখক) তার প্রবক্তা কোন ফারসিয়ান কবি নন; এর প্রবক্তা হযরত আলি (রাঃ)। তাঁর লিখিত রুবাঈ (Rubai);-
‘এলাহি তুবতু মিন কুল্লিল মায়াছি
বে-এখলাছির রাজায়াল্লিল খালাছি,
আ-গেছনি এয়া গিয়াছাল মোস্তাগেছিনা
বে-ফাদলেকা এয়াওমা এয়াখাজু বিন নওয়াছি’।
সমিল পাঁচ পঙ্ক্তির কবিতার মূল ঊৎস সূরা ফিল। ‘খামছা’ বা ‘মখচ্ছম’।
‘আলামতায়রা কাইফাপায়লা রাব্বুকা বিয়াঝহা বিলফিল
আলামিয়াজ আল কায়দাহুম ফি তাতলিল
ওয়ারসালা আলাইহিম তয়াইরান আবাবিল
তারমিহিম বিহাজারাতিম মিন সিযযিল
ফাযালাহুম কাছমিম মাআকুল’।
পাচ পঙ্ক্তির এই কবিতার অন্তমিল ‘বিলফিল,’ ‘তাতলিল,’ ‘আবাবিল’, ‘সিযজিল’, ’মাআকুল’ বর্তমানের আধুনিক সাহিত্যে দুর্লভ।
আর অন্তমিলের ছয় পঙ্ক্তি কবিতার (ষষ্টক বা ‘মছদ্দস’) মূল উৎস সুরা নাস;-
‘কূল আওজু বিরাব্বিন নাস
মালিকিন নাস
ইলা-হিন্নাস
মিন শাররিল ওয়াস ওয়াসিল খান্নাস
আল্লাজি ইয়ো-ওয়াসবিসো ফি ছুদরিন্নাস
মিনাল জিন্নাতি ওয়ান্নাস’ ।
আজকাল ইংরেজি, বাংলা ও অন্যান্য ভাষায় যে কককক খখ গগ ছন্দের আট পঙ্ক্তির অন্তমিলের কবিতা দৃষ্ট হয় তা আল-কোরানের সুরা ‘আলামনাশরাহ-এর যে অনুকরণ তার পরিচয় নিম্নে দেওয়া গেল;-
‘আলামনাশ রাহালাকা ছাদরাকা
ওয়াওয়াদ্দা ওয়ানা আনকা ওয়াজরেকা
আল্লাহজী আনক্কাদা যাহরাকা
ওরাআ কায়না-লাকা যাহরাকা।
ফাইন্না মায়াল উছরে ইউছরান
ইন্নামায়াল উছরে ইউছরান।
ফায়েজা ফারাগতা ফানছাব
ওয়াইলা রাব্বেকা ফারগাব।’
ছয় পঙ্ক্তির এই আরবী কবিতার অন্তমিলে ‘বিন্নাস’, ’কিন্নাস’, ’হিন্নাস’, ’খান্নাস’, ’রিন্নাস’,’ওয়ান্নাস’, শব্দ ঝঙ্কারের যে যাদু সৃষ্টি করেছে, বিশ্ব সাহিত্যে তা দুর্লভ।
সুতরাং সংশয়হীনভাবে বলা যায় যে, আধুনিক বিশ্ব-সাহিত্যে লাইনভিত্তিক, অন্তমিলভিত্তিক ছান্দসিক কবিতা যথা;-দ্ধিপদী, ত্রিপদী, হাইকু, চতুষ্পদী, ক্লারিহিউ, পঞ্চপদী, লিমেরিক, তানাকা সনেট, ছয়-আট-নয়-দশ-বারোপদী কবিতা এবং ভাবপ্রধান, শব্দপ্রধান গদ্য কবিতা, চতুর্দশপদী কবিতা, বর্ণনামূলক, প্রেম উপাখ্যানমূলক এবং অভিসম্পাদমূলক কবিতার উৎস-মূল একমাত্রই আল-কোরান। (আগামী সংখ্যায় সমাপ্য)