আবদুল্লাহ আল-হারুন, জার্মানি থেকে:গত শতাব্দির আশী দশকে জার্মানিতে বাংলাদেশ থেকে সর্বাধিক রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের সমাবেশ ঘটেছিল। পাঁচ হাজারেরও অধিক। তার মধ্যে দক্ষিণ জার্মানির স্টুটগার্টের সন্নিকটে ববলিঙ্গেন শহর ও আশেপাশে প্রায় একশ বাঙালি বাস করত। আমি তার মধ্যে একজন। ১৯৮৭ সালের মে মাসে ‘বিপ্লব’ নামে একটি মাসিক পত্রিকা বের করা হয় এবং প্রথম সংখ্যাটি ছিল ‘বিশেষ নজরুল স্মৃতি সংখ্যা।’ সম্পাদক ছিলেন সহিত্যানুরাগী আমার তখন খুবই একজন প্রিয়জন আবদুল আজিজ তকী। মে, ’৮৭ থেকে ফেব্রয়ারি, ’৮৮ পর্যন্ত মোট নয়টি সংখ্যা বের হয়েছিল। তকী নিজের হাতে তার সুন্দর হস্তাক্ষরে বাংলায় লিখত।
পত্রিকাটি ছিল দ্বিভাষিক। টাইপ রাইটারে (তখনও কম্পিউটারে বাংলা লেখার আগমণ হয়নি) লেখাগুলি আমি একটি টাইপ রাইটারে ইংরেজিতে অনুবাদ করতাম। ফুলস্ক্যাপ সাইজের পত্রিকাটিতে প্রথম অংশে থাকত বাংলা এবং দ্বিতীয় অংশে ইংরেজি। ফটো কপি করে চাহিদা অনুযায়ী ৩০০-থেকে ৫০০ কপি করে জার্মানির যে সব শহরে বাঙালিরা থাকত, সে সব জায়গায় পৌঁছানো হতো। মলাট পরিকল্পনা করত তকী। এক কথায় একমাত্র তার ব্যক্তিগত উদ্যোগেই পত্রিকাটি নয় মাস একটানা বেরিয়েছিল। রাতদিন সে খাটাখাটি করত। লেখা সংগ্রহ, সম্পাদনা ইত্যাদি। সম্পূর্ণ খরচ চলত স্বেচ্ছা প্রদত্ত চাঁদায়। উপদেষ্টা হিসেবে আমি শুধুমাত্র লেখার অনুবাদগুলি করতাম। বাকি সবকিছুর দায়িত্ব পালন করত তকী। দিবারাত্র পাগলের মত পরিশ্রম করত।
‘পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়।’
আমাদের জাতীয় সঙ্গীত (উপরে দেখুন) জার্মানে অনুবাদ করেছিল আমার তৎকালীন সঙ্গিনী, মার্গারেট। আমি সে সময় যে স্বল্প জার্মান জানতাম তা দিয়ে ও অভিধানের সহায়তা নিয়ে, জাতীয় সঙ্গীতের মুল ভাবটি তাকে অনেক ধৈর্য ধরে বুঝিয়েছিলাম। ১০-১২ দিন লেগেছিল। সপ্তম সংখ্যা বিজয় দিবস সংখ্যা, ডিসেম্বর, ১৯৮৭ সালে জাতীয় সঙ্গীতটির জার্মান অনুবাদ মুল বাংলার সাথে প্রকাশিত হয়েছিল। আমাদের পরিচিত বহু জার্মান অনুবাদটি পড়ে খুবই মুগ্ধ হয়েছিল।
পত্রিকাটির সঙ্গে যারা সংযুক্ত ছিল, বর্তমানে তাদের কারো সাথেই আমার কোন সম্পর্ক নেই। তকী সপরিবারে লন্ডনে বাস করে। লন্ডনে আমার একান্তই একটি পারিবারিক ঘটনায় সে বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে (২০০৫) আমার সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করে। ব্যাপারটি দুঃখজনক, সন্দেহ নাই। অন্যদের মধ্যে অনেকেই জার্মান ত্যাগ করে অন্য দেশে গিয়েছে, দেশেও ফিরে গেছে অনেকে। কয়েকজন ইহলোক ত্যাগ করেছে। পত্রিকাটির মোট ন’টি কপি তকী নিজের হাতে একত্রে বাঁধাই করে আমাকে দিয়েছিল। ঘটনাচক্রে আকস্মিকভাবে গত মাসে সেলারে ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে আমি এটা আবিস্কার করি! পুরোনো স্মৃতির ভীষণ বড় একটি আঘাতে মুহ্যমান হয়ে পড়েছিলাম। এখন আমি ’কিংবদন্তি নাট্যকার আবদুল্লাহ আর মামুন’ লেখা নিয়ে দিনরাত ব্যস্ত। প্রবাসের স্মারকলিপি, ‘কালের মন্দিরা’র পান্ডুলিপি সদ্য সমাপ্ত হয়েছে। সামনের বছর মেলায় প্রকাশিত হবে। আশা করছি সামনের বছর লেখার চাপ কম হবে এবং সেই সময় ‘বিপ্লবে’র ন’টি সংখ্যার প্রতিটি নিয়ে আলোচনা করব এবং কোথাও না কোথাও ধারাবাহিকভাবে প্রকাশের সুলুকসন্ধান করব।
জার্মান ভাষায় জার্মানির জাতীয় সঙ্গীত
১৯৯০ সালে পুর্ব জার্মানি পুনরায় পশ্চিম জার্মানির সঙ্গে একত্রিত হয় এবং ঐক্যবদ্ধ জার্মানির জাতীয় সঙ্গীত একেই রাখা হয়েছে। এবং এখানে কোথাও দেশ হিসেবে ‘জার্মানি’র উল্লেখ নেই!
Einigkeit und Recht und Freiheit
Für das deutsche Vaterland!
Danach lasst uns alle streben
Brüderlich mit Herz und Hand!
Einigkeit und Recht und Freiheit
Sind des Glückes Unterpfand –
Blüh' im Glanze dieses Glückes,
Blühe, deutsches Vaterland!
বাংলা অনুবাদঃ
ঐক্য এবং ন্যায়বিচার এবং স্বাধীনতা
জার্মান পিতৃভূমির জন্য!
আসুন আমরা সবাই সে জন্য সচেষ্ট হই
হৃদয়ে হাত দিয়ে ভাই!
ঐক্য এবং ন্যায়বিচার এবং স্বাধীনতা
সুখের অঙ্গীকার-
এই সুখের মহিমায় প্রস্ফুটিত,
হও, জার্মান পিতৃভূমি!
হিটলারের সময় জাতীয় সঙ্গীতের শুরুতেই নিচের প্যারাটি ছিল। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর নতুন জার্মানিতে এটা বাদ দেয়া হয়েছে। শুরুতেই ‘ডয়েচল্যান্ড (জার্মানি)’ দু’বার ছিল। এবং বলা হয়েছিল জার্মানি হলো পৃথিবীর সব দেশের উর্ধে!
Deutschland, Deutschland über alles,
Über alles in der Welt,
Wenn es stets zu Schutz und Trutze
Brüderlich zusammenhält.
Von der Maas bis an die Memel,
Von der Etsch bis an den Belt,
Deutschland, Deutschland über alles,
Über alles in der Welt!
বাংলা অনুবাদঃ
জার্মানি জার্মানি সবকিছুর উপরে,
পৃথিবীর সবকিছু সম্পর্কে,
যখন এটি সর্বদা সুরক্ষা এবং প্রতিরক্ষা সম্পর্কে
ভাইয়ের মত একসাথে লেগে থাকা।
মিউজ থেকে মেমেল পর্যন্ত,
এটস থেকে বেল্ট পর্যন্ত,
জার্মানি জার্মানি সবকিছুর উপরে,
বিশ্বের সবকিছু সম্পর্কে!
লক্ষ্য করার বিষয়ঃ দেশকে এরা ‘পিতৃভুমি’ বলে। যেখানে আমরা বলি মাতৃভুমি।
আমাদের প্রিয় বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতকে যারা বদলাতে চায়, তারা জানেনা- মাতৃভূমি যেমন গর্ভধারিনী মাতার মত অবিনশ্বর ও কালাতীত, অপরিবর্তনীয়- তেমনি জাতীয় সঙ্গীতও অবিচ্ছেদ্য ও চিরন্তন! আমাদের অস্তিত্ব, আমাদের আত্মা, আমাদের চিরকালিন পরিচয়।
আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি ।
চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি ॥
ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে,
মরি হায়, হায় রে—
ও মা, অঘ্রানে তোর ভরা ক্ষেতে আমি কী দেখেছি মধুর হাসি ॥
কী শোভা, কী ছায়া গো, কী স্নেহ, কী মায়া গো—
কী আঁচল বিছায়েছ বটের মূলে, নদীর কূলে কূলে ।
মা, তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো,
মরি হায়, হায় রে—
মা, তোর বদনখানি মলিন হলে, ও মা, আমি নয়নজলে ভাসি ॥
আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি ।
চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি ॥
English
My golden bangla, I love you.
Forever your sky, your wind play flute in my soul.
O mother, the Spring is maddened by the scent of your mango forest,
die alas, alas—
O mother, what sweet smile have I seen in your field full of scent.
What beauty, what shade, what love, what beauty—
What kind of fire have you laid at the root of the banyan tree, at the river bank.
Mother, the words of your mouth are sweet to my ears,
die alas, alas—
Mother, if your mouth is sad, oh mother, I float in tears.
My golden bangla, I love you.
Forever your sky, your wind play Flute in my soul.
German
Mein Goldenbengal, ich liebe Dich-
Immer spielen dein Himmel, deine Luft
In meinem Herz, oh Mutter,
In meinem Herz die Floete.
Oh Mutter,
Im Fruehling, bin ich begeistered
Von dem duft deiner Mangobluetten.
Oh Mutter,
Im Herbst, was habe ich-
Auf dem erntevollen Acker gesehen!
Dein schoenes Lachen habe ich gesehen.
Was fuer eine Landschaft!
Ein Schatten unter den Feigenbaeumen,
Eine Liebe, eine Zauberkraft,
Verbreitest du durch-
Die Geborgenheit in deinem Sari,*
Auch am ufer der Fluesse.
Oh Mutter,
Wenn dein Gesicht blass ist,
Fliesee ich unter den traenen.
- Traditionelle lange Frauenkleidung in Bangladesh
নয়ে ইজেনবুর্গ, ফ্রাঙ্কফুর্ট, জার্মানি
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪