আবদুল্লাহ আল-হারুন, জার্মানি থেকে: বিজ্ঞানীরা বলেন, বিবর্তনের ইতিহাসে ‘ব্যবসায়’ মানবজাতির প্রাচীনতম পেশা। দৈনন্দিন প্রয়োজন যেমন, আহার, বাসস্থান, বস্ত্র ইত্যাদির জন্য অর্থের প্রয়োজন। এর জন্য সহজ ও সরল পথ হলো চাকরি অর্থাৎ দৈহিক বা মানসিক শ্রমের মাধ্যমে কোনো কিছু উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত থাকা। যেমন, কৃষি। মুদ্রা ব্যবস্থার প্রচলনের অনেক আগে থেকেই ব্যবসা হতো বিনিময় প্রথায়। পতিতাবৃত্তিকে অনেক সমাজবিজ্ঞানী বলেন মানুষের প্রাচীনতম ব্যবসা। সবসময়েই এর মূল কারণ অভাব। মূলতঃ অভাবইতো সারাজীবন মানুষকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। আমৃত্যু চাহিদার পূরণ হয় না কোনোদিনই কারণ, ‘এ জীবনে সেই বেশি চায়, আছে যার ভুরি ভুরি’। যার নেই সেও। এটাই মানুষের ভাগ্য। আমি মহাপুরুষ আর সংসারত্যাগীদের কথা বলছি না। তারা বর্তমান পৃথিবীতে সংখ্যায় নিতান্তই নগণ্য। যারা এখনও রামকৃষ্ণের মত মাটি টাকা, টাকা মাটি জপ করেন, পরিচিতরা তাদের বেকুব বলেই মনে করেন! তবে অর্থোপার্জন সৎ বা অসৎ দু’পথেই হতে পারে। তবে এসব আলোচনা অর্থনীতিবিদরা আরো ভালো করে ও বিস্তারিত বলতে পারবেন।
অভাবের কারণে জীবনযন্ত্র অচল হয়ে যায়। দৈনন্দিন দুঃখ আর কষ্টের মূলে এর নিষ্ঠুর ও নিত্য উপস্থিতি, আমাদের মত হতভাগ্য যারা তৃতীয় বিশ্বে জন্ম নিয়েছে তাদের অজানা নেই। এর কঠোর ছোবলে আমরা কমবেশি সবাই সর্বদা ক্ষতবিক্ষত। অভাব দূরীকরণের একটি মস্তবড় ও কার্যকর পন্থা হলো ধার বা ঋণ! স্বয়ং মহাজ্ঞানী চাণক্য বলেছেন ঋণং কৃত্বা, ঘৃতং পিবতি- ঋণ করে হলেও ঘি খাবে। আমরা সেই চাণক্যের দেশের লোক! বাংলাদেশে ব্যাংকের মাধ্যমে ধার নেয়া টাকার যে অংশটি এখনও অপরিশোধিত তা লিখতে গেলে, এ পাতার বাকি জায়গা শূন্য দিতেই শেষ হয়ে যাবে। আমরা বাড়ি করার জন্য ব্যাংক থেকে টাকা লোন নিয়ে ধুমধাম করে মেয়ের বিয়ে দেই। আমাদের দেশেরই কথা- লাগে টাকা দেবে গৌরি সেন। এখনকার গৌরি সেন হলো বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো। শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা পৃথিবীতেই এই গৌরি সেনরা অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা না করে লাগাতার ধার দিয়ে (ম্যানেজাররা তাদের মাধ্যমে কৃত ব্যবসার মোটা বোনাস সিদ্ধ করার জন্য) ২০০৮-এ তো দুনিয়াটাকেই লাটে উঠিয়ে দিয়েছিলেন। প্রথম-দ্বিতীয় বিশ্বের সব রাষ্ট্রপ্রধান, তাদের অর্থমন্ত্রী এবং সরকার গত ২-৩ বছরে লম্বা লম্বা লগি দিয়েও দুনিয়ার এ ত্রিশংকু অবস্থা কাটিয়ে তাকে মাটিতে টেনে আনতে পারছেন না।
অভাব ও ধার দেয়া-নেয়া একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। কাগজের টাকার বয়স তো খুবই কম। তিনশ বছরও হয়নি। নানা ধাতু দিয়ে তৈরি মুদ্রা খৃষ্টপূর্ব তো বটেই সেই সুদূর গ্রিক সভ্যতার সময়ও সিজাররা প্রবর্তন করেছিলেন। বিবর্তনের শুরুতে মানুষ ছিল যাযাবর। অনেক অনেক সহস্র বছর। আফ্রিকা থেকে হাঁটতে হাঁটতে আদি মানব ইউরোপ-এশিয়া আসে আনুমানিক পঞ্চাশ হাজার বছর আগে। আদি যুগে মানব ছিল শিকারি আর সংগ্রাহক। দুর্গম বনে-জঙ্গলে বাস। শিকার করতো শান দেয়া পাথরধারী বল্লম আর লাঠি দিয়ে। গোষ্ঠিবদ্ধ হয়ে রাত কাটাতো গুহায়। মেয়েরা হাতের কাছে খাবারের উপযোগী যাই পেত, কুড়িয়ে নিয়ে আসত। গুহায় জমা করে রাখতো আগামীকালের জন্য। ফ্রান্সের এক গুহায় ৩০ হাজার বছর আগের এক চিত্রে দেখা যায়, আদি দুটি অর্ধলঙ্গ মানুষ। একজন শান দেয়া পাথরের ছুরি দিয়ে আরেকজনের কাছ থেকে ফলমুল নিচ্ছে। অর্থাৎ কিনা বিনিময়। ধারের প্রথম সংস্করণ ছিল বিনিময়। তারপর যখন একজনের কিছু দেবার কিছু থাকত না কিন্তু দরকার, সে তখন ধার নিত। সম্প্রদান কারকের মত ‘সত্ত্ব ছাড়িয়া দান করার’ নিয়ম তখনও হয়নি নিশ্চয়ই। তাই আদি মানুষকে ধার নেয়া জিনিসটি ফেরত নেবার সময় নিশ্চয়ই কথা দিতে হতো, দাতাকে উপরি কিছু দেবে ফেরত দেবার সময়। এটিই আদি সুদ এবং বিবর্তনের সেই সুবেহ সাদেকেই ব্যাংকিং সিস্টেম এসে গিয়েছিল। ‘দিবে আর নেবে’, মিলাবে মিলিবে বলে কবিগুরু যেটার একটা ভদ্র রূপ দেবার চেষ্টা করেছেন।
গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে প্রধান যে প্রশ্নটি সবার মনেই পাক খায় সেটি হলো- এটি কি অর্থ-লগ্নি? না দারিদ্র-মোচন? যারা এর বিপক্ষে তারা একবাক্যে (চক্ষু মুদে) এটি যে একশ পার্সেন্ট ব্যাংকিং-ব্যবসা তা বলে ড. ইউনূসকে একজন বিজ্ঞ এবং চতুর ব্যাংকার বলে তার সমালোচনা করেন। কিন্তু ইউরোপে (হয়ত আমেরিকাতেও) তার চিত্রটি সমাজ-সংস্কারক, গরীবের বন্ধু!
প্রথম বিশ্বে থাকি প্রায় ৩৪ বছর ধরে। বাপ-পিতামহের দোয়ায়, এক আফ্রিকা মহাদেশ ছাড়া গোটা দুনিয়াটাই সফর করার সৌভাগ্য হয়েছে। উত্তর-দক্ষিণ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ার বেশ কটি দেশ এবং ইউরোপের এক সাইবেরিয়া ছাড়া সবখানেই গিয়েছি। বর্তমান বিশ্বের অর্থনীতির যাদুকর দেশ জার্মানির (যাকে চলতি বিশ্বব্যাপি অর্থনৈতিক বিপর্যয়ও কাত করতে পারেনি) পাসপোর্ট তো পকেটেই। যদিও এখানে আমার সর্বাঙ্গীন অবস্থা, ঢাকার বস্তিবাসীদের মত। স্বল্প পেনশনে দিন এনে দিন খাওয়া! যাক সেসব এখানে অপ্রাসঙ্গিক।
আমার সমগ্র বিশ্বকে দুই চক্ষু মেলিয়া দেখার প্রধান অভিজ্ঞতাগুলির একটি হলো- আমাদের দেশের ধনী লোকরা শহরে তাদের বাড়িতে গ্রাম থেকে গরীব আত্মীয়স্বজনের শিশু সন্তানদের পড়াশুনা করিয়ে মানুষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়ে আসেন। কিন্ত কার্যত তাদের দিয়ে বাড়ির চাকর-চাকরানির কাজ করান। তবে পেট ভরে খাবার ও গায়ের পোশাক দেন তাদের দেহযন্ত্র চালু রাখার জন্য। বাবা-মাকেও মাঝে মাঝে নগদ টাকা দেন। তেমনি প্রথম বিশ্বের সরকার ও বিত্তশালী মানুষরা (এরই সংখাধিক্য) তৃতীয় বিশ্বের জন্য উন্নয়ন-সাহায্য ঋণ-মওকুফ ও ঝড় তুফান হলে, পত্র-পত্রিকায় টিভি-রেডিওতে, আজকাল ইন্টারনেটেও বিজ্ঞপ্তি দিয়ে (অনেকে রাস্তায় কৌটা হাতে নিয়েও) টাকা তোলেন। মিলিয়ন মিলিয়ন টাকা ওঠে, সরকার কয়েক মিলিয়ন তার সাথে যোগ করেন। মনে রাখতে হবে যার এখানে রোজগার (মাসিক গড়ে) ২,০০০ ইউরো (দু লাখ টাকার মত), টিভিতে ঘূর্ণিঝড়ে ডোবায় পড়ে থাকা শিশুর মৃতদেহ দেখে আকুল হয়ে সে ৫-১০ ইউরো (৫০০-হাজার) দান করে বিয়ারের বোতল খুলে পান করে স্বগতোক্তি করে, ‘আহা কি করুণ মৃত্যু!’একসময়ে (আশি দশকে) জার্মানিকে কয়েক বছর ধরে গ্রিণ পার্টি ও তৃতীয়-বিশ্বপ্রেমীরা, Jute statt plastik (প্লাস্টিক নয় পাট) বলে একটি বিরাট আন্দোলন করে। ঘরে-বাইরে প্রায় সবার হাতেই সৌখিন দামী ‘ফুটানি কি ডিব্বা’র বদলে পাটের ব্যাগ! দেখে আমাদের দেহ মন উল্লসিত। দেশে থাকতে জানতাম, আগাছা হিসেবে উপড়ে তোলা পাটের চারার শাক-ভাজি খুবই তৃপ্তিকর। চটের ব্যাগ হিসেবে এটা চাল-ডাল-চিনি সবই বহন করতে পারে। জার্মান-রূপসীদের হাতে এটা একদিন শোভা পাবে, কে জানত? চার-পাঁচ বছর পরেই চটের ব্যাগ হাওয়া হয়ে গেল!
প্রাচুর্যের একটি অপ্রিয় সত্য হলো কিছুই বেশিদিন মডেল বা ফ্যাশন হিসেবে থাকে না। জগিং, অ্যারোবিক, দ্রুত-হাঁটা, ব্যবসায়িক ভিত্তিতে শহরে শহরে জিমের প্রতিষ্ঠা ও স্বাস্থ্য রক্ষার্থে শিশু-তরুণী-বুড়ো-বুড়িদের সমবেত ব্যায়াম চর্চা! কিছু এখনি একদিন পাটের থলির মত মিলিয়ে গেছে। বাকিরাও যাবে! এখন বাম্বি-জাম্পিং, মোবাইলে-নেভিগেশানে ঠিকানা বিনিময় করে ডিস্কো ও নানাস্থানে দেখা-সাক্ষাত, অজানা জঙ্গলে বা দ্বীপে Survival-Adventure করেছে।
ড. ইউনূস শান্তির জন্য নোবেল প্রাইজ পাবার পরেই বাংলাদেশ আবার ইউরো-আমেরিকার হেডলাইন-নিউজে এসে গিয়েছিল। দুষ্টু লোকেরা বলে বুশের প্রেসিডেন্সির সময় নাকি তার প্রাইজটা আমেরিকার নির্দেশে দেয়া হয়নি, যদিও তার আগেরজন, ক্লিন্টন অনুমোদন করেছিলেন। যাক শান্তি-নোবেল বাংলাদেশে গেল, বিরাট ব্যাপার। যেখানেই যাই, অভিনন্দন! ক্ষুদ্র-ঋণের মধ্যে তৃতীয় বিশ্বের ভবিষ্যত রক্ষার বীজ নিহিত, এখানকার বড় বড় অর্থনীতিবিদরা একবাক্যে মত দিলেন। কাগজে কাগজে তাঁর ওপর প্রশংসাবাণীর সাথে গ্রামীণ-ব্যাংকের ওপর রিপোর্ট প্রকাশ হলো। টিভির নানা চ্যানেলে টক শোগুলি গ্রামীণ-ব্যাংক আর ড. ইউনূসের কার্যকলাপের নানারকম ব্যাখ্যা করলেন। আফ্রিকার কয়েকটি দেশেও তার এই পদ্ধতি প্রবর্তন করে খুবই পজিটিভ ফল পাওয়া গেছে। এ সব কথাবার্তাতেই জানা গেল। দক্ষিণ আমেরিকার কয়েকটি দেশেও সমাজসেবীরা এ উদ্যোগ নিয়েছেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সেই ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল প্রাইজ পেয়ে, পৃথিবীতে বাংলা ভাষার মুখোজ্জল করেছেন। তখন অবিভক্ত বাংলা। ভারতবর্ষ পুরো একটি দেশ। কাজেই তার এই কৃতিত্বে আমরা বাঙালি চিরকালই তার প্রতি কৃতজ্ঞ। স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত তাঁর রচনা। কবির প্রতি আমাদের এই শ্রদ্ধা বিশ্বে সুনাম কুড়িয়েছে।
ড. ইউনূস শান্তির জন্য নোবেল প্রাইজ পেয়ে আবার একবার বাঙালির প্রতি পৃথিবীর দৃষ্টি আকর্ষণ করাতে পেরেছেন। বাঙালি যে শুধু গান আর কবিতাচর্চা করে না- অলস বলে আমাদের একটা দুর্নাম সর্বত্রই আছে। দৈনন্দিন জীবনের দারিদ্র থেকে রক্ষা পাবার জন্য আমরাও সচেতন এবং সবচেয়ে বড় কথা হলো, আমাদের ব্যবস্থা আমরা নিজেরাই করতে পারি। বাইরে থেকে গণতন্ত্র (বা অন্য কোনো তন্ত্র) রপ্তানি করার (বুশের আফগানিস্তান-নীতি) দরকার আমাদের নেই। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বের কাছে ড. ইউনূস তা অত্যন্ত সুদৃঢ়ভাবে প্রমাণ করে দিয়েছেন। আমি এখানে বিশেষজ্ঞদের আলোচনা ও লেখায় একটা চাপা বিস্ময় উপলব্ধি করেছি! রবীন্দ্রনাথের জুতা আবিষ্কারের হবুচন্দ্র রাজার মত একটা আক্ষেপ- আমারও ছিল মনে, ‘কেমনে বেটা তা পেল জানতে জাতীয়।’ ধনী রাষ্ট্রের জ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞদের কৃত, তৃতীয় বিশ্বের মূর্খ জনসাধারণের ভাগ্যোন্নয়নের সমস্ত থিয়োরির কপিরাইট তো আমরা সেই কলোনিয়াল যুগ থেকেই রিজার্ভ করে রেখেছি। বৃটিশ আজও সদর্পে বলে, অজ্ঞ এশিয়ানদের তারা স্কুল কলেজ, রাস্তা-ঘাট, কলকারখানা আর পোস্টাপিস করে দিয়ে, অন্ধকার থেকে সভ্যতার আলোকের নিচে নিয়ে এসেছে। যদিও ওরা আসার আগেই আমাদের তাজমহল গড়া হয়ে গিয়েছিল। এসব জোর গলায় বলার সময়, তখন তারা যে দু’আনা ইনভেস্ট করে বিক্রির বারো আনাই গ্রাস করতো, এটা কিন্তু বলে না। এখানেই ড. ইউনূসের প্রধান কৃতিত্ব। বাঙালিকে আবার বিস্মৃতির অতল তল থেকে পৃথিবীর প্রথম-দ্বিতীয় কাতারে নিয়ে আসা। রোজ কেয়ামত পর্যন্ত যে আমাদের ধনী রাষ্ট্রগুলোর তাদের বার্ষিক বাজেটের ০.০৫-০,০১ পার্সেন্ট উন্নয়ন সাহায্য আর ঋণ (আর মওকুফ করা) নিয়ে বাঁচতে হবে না, এটা প্রথম ড. ইউনূসই ইউরোপিয়ান-ইকোনোমিস্টদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছেন।
তার পক্ষে প্রধান যুক্তি বৈঠকখানায় বসে রাজা-উজির না মেরে, যা আমাদের দেশের ইন্টেলেকচুয়ালদের সিংহভাগই করে থাকেন, ড. ইউনূস কিছু তো একটা করেছেন। আমি ২০০৮-এ দুবার বাংলাদেশে গিয়েছি, প্রবাসে দীর্ঘ তিরিশ বছর একটানা থাকার পর। দু বারই বহুবার অনেক গ্রামে গিয়েছি। এখনও আমার অনেক আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব গ্রামেই থাকেন। সবজায়গায় দেখেছি, গ্রামের তরুণী-গৃহবধু বা বয়স্কারা অনেকেই প্লাস্টিকের স্যান্ডেল পায়ে, ধোয়া বর্ণিল শাড়ি পড়ে ছাগল বাধা দড়ি হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অনেক বাড়িতেই লাগোয়া জায়গায় নানা শাকসবজির বাগান। গ্রামের মেয়েরা আর আগের মত পরপুরুষ দেখে দৌড়ে বাড়ির ভেতরে ঢোকেন না। বরঞ্চ সরাসরি চোখে চোখে চেয়ে ভাবেন, ‘নতুন এনজিওর লোক মনে হয়!’ গ্রামীণ ব্যাংক আমাদের শতাব্দীর বঞ্চিত, অবহেলিত ও নির্যাতিত মেয়েদের (বিশেষকরে পল্লীর) আত্মসম্মানবোধ ফিরিয়ে দিয়েছেন। রান্না-বান্না আর স্বামী-সন্তানের দৈনন্দিন সেবা শুশ্রুষা, নিজে না খেয়ে তাদের খাওয়ানোর (বানানো) ঐতিহ্য থেকে মুক্তি দিয়েছেন। স্বামীর ঘর করা ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় নেই, এই দাসত্বের শৃংখল থেকে বাইরে নিয়ে এসেছেন। দিয়েছেন, অন্য একটি ভূবনের স্বাদ। স্বাধীনতা, নিজের ইচ্ছা পূরণের সুযোগ। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর শক্তি।
অনেকেই বলেন, তার ব্যাংকের সুদ বেশি। এ দেশেও কোনো ব্যাংকেই সুদের হার ১২-১৩% কম নয়। সে হিসেবে (ইউরো-টাকা) না গিয়ে একটা কথাই বলব- সাধারণ ব্যাংকরা তাদের ব্যবসায়ী-শিল্পপতি ক্লায়েন্টদের লাখ-কোটি টাকা ঋণ দেন। একটি জায়গা থেকেই ব্যাংকের যে সুদ আসে, তা পেতে গ্রামীণ ব্যাংককে তো কয়েক হাজার লোককে বেশি টাকার ঋণ দিতে হবে! কারণ সে তো মাথাপিছু ২০০-৩০০ টাকার বেশি ঋণ দেয় না। যারা নেন, তারা এর বেশি চানও না। তাদের চাহিদা কম, যা তারা করতে চান, তাতে পুঁজিও বেশি লাগে না। তারা তো আর ঋণ নিয়ে বাড়ি বানাবেন না বা বিরাট কোনো ব্যবসাও করবেন না। তাদের উদ্দেশ্য দিন এনে দিন খাওয়ার ব্যাপারটি সুনিশ্চিত করা। সাধারণত এক বেলা খাবার পর, অধিকাংশই জানে না, পরের বেলার খাবারটি কখন হবে! আদৌ হবে কিনা। সে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়া। সন্ধ্যার খাবার খেয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়া, কারণ পরের দিনের আহার নিশ্চিত। গ্রামীণ ব্যাংকের যারা নিয়মিত খদ্দের, তাদের পারিবারিক-সামাজিক অবস্থান তো কিছু বিবেচনা করতেই হবে। স্কুলে পড়ার সময় যে বই পড়তে নিয়ে আর ফেরত দিত না, তাকে পরেরবার আর বই দেইনি। ঋণের টাকা যথাসময়ে ফেরত পাওয়ার ন্যূনতম গ্যারান্টি হলো, যে নিচ্ছে তার প্রেক্ষাপট। বাংলাদেশের পনোরো কোটি লোকই কি ব্যাংক-লোন, তা কেন না গ্রামীণ ব্যাংকেই হোক, পাবার যোগ্যতা রাখেন? চালচুলো যার নেই, যাকে কেউ চেনে না, ব্যাংকে ঢুকে সে লোন চাইলে, তাকে ঘাড় ধরে না হলেও, বুঝিয়ে সুজিয়ে তো খালি হাতেই বিদায় করা হয়! আমার এত সব কথা বলার মূল কারণটি হলো, যাবতীয় উদারতা আর শিথিলতম শর্তের পরেও, গ্রামীণ ব্যাংকের ক্লায়েন্টেদেরও সংখ্যা-সীমা আছে। কাজেই যেখানে সীমা, সেখানে নিজের ভিত্তি জোরদার করতে একটি চোখ বন্ধ করতেই হয়। ব্যাংকের মূল আয়ই হলো, সুদ। এখানে যারা কাজ করেন, কারা দাতব্য করেন না, বেতন নেন। ব্যাংক যে কোনো চ্যারিটেবল প্রতিষ্ঠান নয়, তা আমাদের দেশের (বিদেশেও) অনেক বিদগ্ধই ভুলে যান, যখন তারা গ্রামীণ ব্যাংকের তুলোধুনো করেন। তারা কেন ভাবেন না, গ্রামীণ শব্দটির পেছনেই ব্যাংক আসে। ড. ইউনূসকে যারা জোর করে দাতা মহসিন বা রণদাপ্রসাদ সাহার সঙ্গে একসারিতে বসাতে চান, তারা নিজেরাই ঠিকমত বুঝতে চান না, দান ও লগ্নির মথ্যে পার্থক্যটি। সেই আদি যুগ থেকেই অর্থ-লগ্নির পুরোনো ব্যবসাটি তথা আচরণটি আমাদের বিবর্তনের পেছনে ছায়ার মত অনুসরণ করছে। চরকায় তেল না দিলে সেটাও ঘোরে না! দানধ্যানে যে জাতীর উন্নতি হয় না তার প্রমাণ স্বাধীন বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পর ৩-৪ বছরে আমাদের দেশটিকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন রাষ্ট্র যত সাহায্য করেছে, সে পরিমাণ সাহায্য তো কোনো দেশকেই এ পর্যন্ত করা হয়নি (জাতিসংঘের হিসাব)। কিন্তু প্রয়াত জাতির পিতাকেও প্রকাশ্য মিটিং এ বলতে শুনেছি, ‘আমার কম্বল কই?’ যে অর্থে গায়ের ঘাম নেই তা খরচ করতে কোনো দ্বিধা হয় না। পড়ে পাওয়া টাকা দিয়ে (বা লটারি জিতে) জীবনে সাময়িক স্বাচ্ছন্দ্য আনা যায় কিন্তু স্থায়ীভাবে নয়।
ম্যাক্সিমাইজেশান অব প্রফিট বা মুনাফাই হলো পুঁজিবাদী অর্থনীতির মূলমন্ত্র। তাহলে এর বিকল্প কি? সমাজবাদ তো তিরোধান করেছেন। ’৯০ দশকে নিজের চোখেই দেখলাম, রাশিয়াসহ ১৪-১৫টি পূর্ব ইউরোপীয় সমাজবাদী দেশ তাসের ঘরের মত ধ্বসে গেল। গত বছরগুলিতে এসব দেশের অনেক লোকজনের সাথেই কথা বলেছি। পূর্ব জার্মানির কয়েকজন তো আমার প্রতিবেশী। কেউ তো সমাজবাদের পতনে এক ফোটাও দুঃখ করে না। রাশিয়ার ৭০ বছরের সমাজতন্ত্র, মহান লেলিনের মন্ত্র-আদর্শ কোনোটাই ১% রাশিয়ানদেরও মনে জায়গা নিতে পারেনি। একদলের ব্যবস্থা টিকিয়ে রেখে চীন আজ অর্থনীতির বল্গা খুলে দিয়েছে। জার্মানির কোটি টাকার গাড়ি পোরসে, মার্সিডিজ বেঞ্জের ক্রেতা আজ চীনেই বেশি। সাংহাই ঘুরে এসে লোকেরা বলে, প্যারিস এর কাছে কিছু না! বিপ্লবের আগে বৃটিশ শতবছর চীনের জনতাকে আফিম খাইয়ে মেরুদন্ডহীন করে রেখেছিল। এখনকার চীন সরকারের আফিম হলো মুক্ত অর্থনীতি। রাজনৈতিক অধিকারের বিনিময়ে চীনের লোকেরা এ আফিম কিনে প্রতিদিন পান করে! তিয়েন-মিয়েন স্কয়ারে মহান মাওয়ের একটি ছবিতেই তার স্মৃতি এখন গোটা চীনে সীমাবদ্ধ। অত বড় কয়েক ঘণ্টার অলিম্পিক উদ্বোধনের জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের সময় (২০০৮) মাও সে তুং-এর এক সেকেন্ড উদ্ধৃতিও ছিল না। কিন্তু সব রক্তচোষা প্রাচীন রাজাদের (যারা লাখ লাখ দরিদ্র ও সাধারণ চীনদের হত্যা করেছে) কীর্তি ঢালাও করে দেখানো হলো। চীনের দেয়াল দেখে সবাই চমৎকৃত। কিন্তু দেয়ালের নিচেই যে ক্ষুধা ও রোগেশোকে নিহত হাজারো শ্রমিকের সমাধি, তা কজন জানে? বর্তমান চীনের স্থপতি মাওকে আজ চীনের লোকেরাই ভুলে গেছে! জাতি হিসেবে আমরা একাই অকৃতজ্ঞ নই। আমরাও তো ভুলে গেছি, বাংলাদেশের উৎপত্তি! তাহলে পথ কোথায়?
এখানে বলে, Survival-Adventure-‘ গির্জাকে গ্রামেই রেখে দাও’। কাজেই ড. ইউনূস তার গ্রামীণ ব্যাংকটি জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান না বলে, যেখানে শুধুই একতরফা জনগণের মঙ্গল, জনগণের দায়িত্ব গঠনের প্রতিষ্ঠান বলুন। চ্যারিটি নয় বরং কাজ করা এবং যার যার দায়িত্ব সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন হতে হবে। মঙ্গল জাতীয় শব্দে ভুল বুঝাবঝির সম্ভাবনাই বেশি। ব্যাংক যে মুলতঃ সেই চিরন্তন একটি ব্যবসা, যা সৃষ্টির শুরু থেকেই আছে, তাকে আপনি গ্রামীণ টাইটেল দিয়ে অনেককেই বিভ্রান্ত চিন্তার সুযোগ করে দিয়েছেন। বেশ কিছু লোকজন মনে করে গ্রামীণ মানেই গরীব লোকের প্রোপার্টি এবং এখানে গরীবরা শুধু দান পাবে! আমাদের দেশে এটাই মুশকিল, কারো জন্য কোনো কিছু করতে গেলেই, অধিকাংশই ভাবে আহা লোকটি কত উদার, মহানুভব, আমার জন্য কতকিছু করছেন! তাকে কিছুই ফেরত দিতে হবে না! কিছুটা দাবির মতই তার মনোভাব। ধর্মীয় ও সামাজিক নানা ব্যাপার ও বিশ্বাস যেমন, জাকাত, ওয়াকফ, ফকির খাওয়ানো, ফকিরকে ভিক্ষা দেয়া, চল্লিশা, কুলখানি ইত্যাদি আমাদের চিন্তাভাবনাকে সামাজিক ক্রিয়াকর্মের বিষয়ে আবহমান কাল থেকেই সংকীর্ণ ও সীমাবদ্ধ করে রেখেছে। ভারতীয়দের কাছে ভিক্ষুক স্বয়ং ভগবান! আমরা বুঝি হয় আমার নিজের টাকা খরচ করতে হবে না হয় দান পেতে হবে এবং সে পাওয়াটি পুনরায় ফেরত দেবার যে কোনো দায়বদ্ধতা থেকে আমরা চিরমুক্ত। টাকা ধার দেয় মহাজন, সুদখোর, ব্যাংক, ধনী স্বজন বা বন্ধু। এসব ধারে সুদের চড়া হার সর্বজনবিদিত। যারা নেয়, পেয়েই খুশি, ১০০% সুদেও আপত্তি নেই। প্রয়োজনের বার বড় বার!
আমাদের দেশে একসময়ের কাবুলিওয়ালাদের কথা আজকের প্রজন্মের মনে নেই। তারা দশ টাকা ধার দিয়ে সপ্তাহে এক-দু টাকা সুদ নিত। আসল ফেরত দিতে গেলে বলত, আরে না না, আসল না, শুধু সুদ দিয়ে যাও। অনেকসময় প্রদত্ত সুদ আসলকে কয়েকগুণ ছাড়িয়ে যেত। কিন্তু ধার ধারই থেকে যেত। এখনকার মডার্ন ব্যাংকিং কিছুটা এধরনের। সুদের চক্রবৃদ্ধি হার তো সব ব্যাংকেই আছে। এখানে বাড়ি বানানোর সময় ধার নিলে যদি দশ বছরে মাসিক একটা নির্দিষ্ট হারে ধার শোধ করার চুক্তি হয়, তাহলে ঐ দশ বছরই টাকা দিয়ে যেতে হবে। মেয়াদ শেষ হবার আগে সুদসমেত টাকা ফেরত নিতে আগ্রহ দেখায় না ব্যাংক। কারণ সুদই তো তাদের ব্যবসার মুনাফা এবং এটা বেআইনি কিছুও নয়। গ্রামীণ ব্যাংকের ম্যানিফেস্টোতে পানিকে পানি এবং দুধকে দুধ বলাই ভালো। সমাজসেবার লক্ষ্যে তারা দারিদ্র-মোচনে আগ্রহী কিন্তু নিজেরা সর্বস্বান্ত হয়ে নয়, কী সমালোচনায়, কী শক্রতায়! এটা যে একটি ব্যবসা এবং সে ব্যবসার সাথে জনসাধারণ প্রত্যক্ষভাবে তাদের ভাগ্যোন্নোয়ন ও জীবনযাপনের সাথে জড়িত, এটাই লাইমলাইটে আনতে হবে। চ্যারিটির ভূতটিকে এর গা থেকে অবশ্যই ঝেড়ে ফেলতে হবে এবং তা শিগগিরই!
আমার মনে হয় ড. ইউনূস ও তাঁর সহকর্মীদের এখন আশি লক্ষ মহিলা গ্রাহকদের প্রতি দৃষ্টি বেশি দিতে হবে। যে ব্যাংকের এতগুলি একাউন্ট-হোল্ডার, তাকে বাইরে কে কী বলল তা নিয়ে মাথা না ঘামানোই ভালো। যে জেগে ঘুমায় এবং ওঠতে চায় না, তাকে সারাদিন ডাকলেও সে বিছানা ছাড়বে না। গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে যে সব আলোচনা-সমালোচনা পড়েছি বা শুনেছি, তাতে তিন ধরনের বক্তব্য নজরে এসেছে। প্রথমঃ সন্দিগ্ধমনা এবং স্বঘোষিত বিদগ্ধ বিশেষজ্ঞদের। এদের কাজই হলো, যাই কিছু নতুন প্রবর্তিত হলো বা কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তার শুরু থেকেই সমালোচনা করা। সক্রেটিস এদেরকেই বলেছেন, অসন্তষ্ট আত্মা ও ঈর্ষাকাতর। যে কোনো ভালো কাজকেই এরা হয়ত নিজেরা করতে পারছে না বলে, সমালোচনায় মুখর। কিছুটা ইশপের গল্পের শৃগাল! লাফিয়ে আংগুর পর্যন্ত পৌঁছাতে না পেরে যে বলেছিল, আংগুর ফল টক। এদের নিয়ে তেমন ভয় নেই। কারণ যারা এদের চেনেন এবং যারা এদের লেখা পড়েন বা কথা শোনেন, পাঠক বা শ্রোতা সবার কাছেই তারা মোটেও জনপ্রিয় নন।
দ্বিতীয় দলে আছেন ব্যাংক-এর বেতনভোগী বিশেষজ্ঞরা। এরা সাধারণ ব্যাংকারদের স্বার্থেই গ্রামীণ ব্যাংকের বিরোধিতা করেন। অনেকটা নিজেদের দোষ কাটানোর জন্য অন্যের (প্রায়শই বানানো) ত্রুটির দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করেন। এরা খুব ভালো করেই জানেন, গ্রামীণ ব্যাংকের সাধারণ ক্লায়েন্টরা কোনোদিন তাদের ব্যাংক-বসদের দোঁরগড়াতেও যেতে পারবে না, কোনো সুযোগ-সুবিধা বা ঋণ পাওয়া তো দূরের কথা! কিন্তু ব্যাংক হিসেবে তাদের ইমেজ যে গ্রামীণ ব্যাংক দ্বারা কিছু না কিছু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা টের পেয়েই তারা প্রত্যাঘাতে এগিয়ে আসছেন। এদের নিয়ে সতর্ক থাকা উচিৎ। যা তারা বলেন, তার জবাব যেন গ্রামীণ ব্যাংকের সবসময় প্রস্তুত থাকে। নিরবতাকে এরা দুর্বলতা মনে করে এবং তাদের কথার স্বীকৃতি মনে করে আরো দুঃসাহসী হয়ে উঠে।
তৃতীয় দলটি সংখ্যালঘিষ্ট। হতে গোনা কিন্তু খুবই শক্তিশালী। এরা দেশে বিশেষজ্ঞ মহলে বয়োজ্যেষ্ঠ মুরুব্বী বলে পরিচিত। এরা সাতকে পাঁচ বানাতে পারেন। অনেক লোক তা মেনেও নেন। সবচেয়ে বড় সত্যটি হলো এরা আসলেই জ্ঞানী। এখানেই নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য মহাবিপদটি ওঁৎ পেতে আছে। এরা এদের লেখনির ধারে সাধারণ পাঠক-পাঠিকাদের একটি শক্ত বিশ্বাসকে টলিয়ে দিতে পারেন। আমার ধারণা, গ্রামীণ ব্যাংকের মত একটি সামাজিক ও জনগণের কল্যাণের জন্য প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানকে এরাই সমালোচনার কশাঘাতে সবচাইতে বেশি আহত করেছে। গোঁদের ওপর বিষফোঁড়া হয়েছে, নোবেল শান্তি পুরস্কার। এখানে আমার একজন জার্মান শিক্ষক-বন্ধু ড. ইউনূসের ‘নোবেল-শান্তি পুরস্কার’ পাবার পর বলেছিলেন, ‘এখন থেকে তাঁর শত্রুর সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে। সমালোচনার পরিমাণও বেড়ে যাবে। একসময় (হয়ত) তার নিজেরই মনে হবে, পুরস্কারটি না পাওয়াই বোধহয় ভালো ছিল!’ আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সে সময়টি আসবে না। ড. ইউনূসের কর্মসূচি এখন পরীক্ষিত। উপকৃতের সংখ্যাও দিন দিনই বাড়ছে। আমি শুনেছি তার সহকর্মীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশই হল তরুণ-তরুণী। এটা আশার কথা। এসব মহৎ উদ্যোগে যোগ্য ও অভিজ্ঞ উত্তরাধিকারীদের প্রয়োজন অনস্বীকার্য ও অপরিহার্য।
আমাদের দেশটি এখন একটি গাঢ় অন্ধকার সুরঙ্গের মধ্যে। কিন্তু এটা সচল, থেমে নেই। যে দিকে আমরা যাচ্ছি, সুরঙ্গের সে মাথায় ক্ষীণ হলেও স্পষ্ট একটি আলোর আভা দেখা যায়। এই আলোর একটি উৎস নিঃসন্দেহে গ্রামীণ ব্যাংক। এই ক্ষণজন্মা মানুষটি আজ বাংলাদেশের হাল ধরেছেন। আমি মনে করি যোগ্য একটি মানুষের হাতেই আজ দেশ পরিচালনার ভার পড়েছে। সবার উচিত তাঁকে সবরকমের সহযোগিতা করা।
আমি ড. ইউনূসের নীরোগ ও দীর্ঘজীবন কামনা করি।
নয়ে-ইজেনবুর্গ, জার্মানি, ২০১০, হালনাগাদ-২০২৪