মানচিত্র নিউজ: পিরোজপুরের নাজিরপুরে এসি ল্যান্ডের ঘুষের রেট নির্ধারণ করে দেওয়ার আলোচিত ঘটনায় এবার প্রশাসনের শক্ত ভূমিকা এবং উপযুক্ত তদন্তের ভিত্তিতে আরো দুইজন কর্মচারীকে জেলার বাইরে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে। বুধবার বরিশাল বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) মো. আহসান হাবিব স্বাক্ষরিত এক আদেশে তাদের আগামী সোমবার (২ অক্টোবর) এর মধ্যে বদলিকৃত নতুন কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার অদেশ দেওয়া হয়।
আদেশ সূত্রে জানা যায়, ইন্দুরকানী ভূমি অফিসের সার্টিফিকেট পেশকার মারুফ হাওলাদারকে বরিশাল জেলার হিজলাতে এবং নাজিরপুর ভূমি অফিসের মিউটেশন কাম-সার্টিফিকেট সহকারী মফিজুল ইসলামকে ভোলা জেলার মনপুরা ভূমি অফিসে বদলি করা হয়েছে। একই কারণে ইতোপূর্বে আরো ৪ জনকে বিভিন্ন জেলায় বদলী করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাজিরপুর ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে সাময়িকভাবে বরখাস্ত হওয়া এসি ল্যান্ড মাসুদের ঘটনায় মারুফ হাওলাদার ও মফিজুল ইসলামের অপরাধের সম্পৃক্ততা মিলেছে। তাই তাদের বদলি করা হয়েছে। অপরাধ চূড়ান্ত প্রমাণিত হলে দুজনের বিরুদ্ধে আরো প্রশাসনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য এর আগে একই কারণে ইতোপূর্বে নাজিরপুরের ৪ ইউনিয়নের তহশিলদার ও সহকারী তহশিলদারদের জেলার বাইরে বদলি করা হয়েছে। রবিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) মো. আহসান হাবিব স্বাক্ষরিত এক আদেশে তাদের মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ওই বদলীকৃত নতুন কর্মস্থলে যোগদানের আদেশ দেওয়া হয়।
আরো যে ৪ জনকে বদলি করা হয়েছে তারা হলেন, উপজেলার শ্রীরামকাঠি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভূমি অফিস সহকারী কর্মকর্তা পরিমল কুমার দেকে বরগুনার তালতলি উপজেলার পচাকোড়ালিয়া ইউনিয়নের ভূমি অফিস, মাটিভাঙ্গা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা মো. সুজনকে বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার আলিমাবাদ ইউনিয়ন ভূমি অফিস, নাজিরপুর সদর ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা শাহজাহান কবিরকে ভোলা জেলার তজুমদ্দিন উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস এবং উপজেলার শেখমাটিয়া ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা মো. হাসান হাওলাদারকে বরিশাল জেলার হিজলা উপজেলার ধুলখোলা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে বদলি করা হয়েছে। ওই আদেশ সূত্রে জানা গেছে, বদলীকৃতরা ওই নির্ধারিত তারিখে যথাযথ সময়ের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগদান না করলে পরের দিন বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) অপরাহ্ণে বর্তমান কর্মস্থল থেকে অবমুক্ত হিসেবে গণ্য হবেন।
গত জুলাই মাসের প্রথম দিকে উপজেলা ভূমি অফিসের এসি ল্যান্ড মো. মাসুদুর রহমানের সাথে তার নিজ অফিসকক্ষে বসে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের তহশিলদার এবং অফিস সহকারীদের মিটিং এ নামজারির জন্য এসিল্যান্ড কর্তৃক ঘুষের টাকা নির্ধারণের একটি কথোপকথন হয়। পরে ওই কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গত বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) তদন্ত করে। ওই প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় অভিযুক্ত এসি ল্যান্ডকে সাময়িক বরখাস্ত করে।
বিভিন্ন তথ্য সূত্রে জানা গেছে, এর আগে উপজেলা বিভিন্ন ইউনিয়নের তহশিলদাররা মিউটেশনের জন্য আসা সেবাপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে কেসপ্রতি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা করে ঘুষ নিতেন। এসি ল্যান্ড মো. মাসুদুর রহমান গত ৮ জুন নাজিরপুরে যোগদানের পর নাকি ওই ঘুষের টাকা কমিয়ে ছয় হাজার টাকা করেন। ওই টাকা থেকে তিনি চার হাজার টাকা আফিসের জন্য দাবি করায় অফিসের সহকারীরা (যারা টাকা গুলো তহশীলদারদের কাছ থেকে তুলতেন মূলত) ক্ষিপ্ত হয়ে ওই অডিও ফাঁস করে দেন।
ভূমি অফিসের সাথে সম্পর্কিত সূত্রগুলোর মতে এসি ল্যান্ড মাসুদুর রহমানের কিছু ইতিবাচক সিদ্ধান্ত উল্লিখিত তহসিলদার এবং স্বার্থসংশ্লিষ্টদের মন:পুত না হওয়ায় তারা মাসুদুর রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। যে অডিও ফাঁস হয়েছে তাও খন্ডিতভাবে ফাঁস হয়েছে বলে সূত্রগুলো দাবি করে। এ বিষয়ে এসি ল্যান্ড মাসুদুর রহমান তার বিরুদ্ধে অভিযোগকে অস্বীকার করে মানচিত্রকে বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। একটি চক্রান্তের শিকার হচ্ছি আমি। উপর মহল থেকে নির্দেশনা যেভাবে আসে আমি আসলে সেভাবে কাজ করে থাকি। কিন্তু কখনো কোনো আর্থিক বিষয় নিয়ে আমার সঙ্গে কারো কথা হয়নি। বরং নামজারী সহযোগী মফিজুল এবং মারুফ (পূর্বের পেশকার) তারা বিভিন্ন কারণে আমার উপর সংক্ষুব্ধ হয়ে এমনটা করার কথা শুনেছি এবং আমার পূর্বেও এই স্টেশনে আগের এসি ল্যান্ডদের এরকম কিছু সমস্যায় পড়তে হয়েছিলো এদের চক্রান্তের কারণে- যা নাজিরপুরের সবাই জানেন।