পাকিস্তানের মানসিকতা, দৃষ্টিভঙ্গি, সেখানকার প্রশাসন এবং সেনাবাহিনীর চরিত্র নিয়ে ব্যাখ্যা দিলেন আমেরিকার মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ-র (সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি) প্রাক্তন প্রধান মাইকেল মোরেল। একইসঙ্গে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, গোটা দুনিয়া জানে বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশ হল পাকিস্তান। ইসলামিক সন্ত্রাস, পঙ্গু প্রশাসন, পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার আর উচ্চাকাঙ্ক্ষী সেনাবাহিনীর সম্মিলিত অবস্থানই পাকিস্তানকে দুনিয়ার মানুষের কাছে অতিবিপজ্জনক করে তুলেছে। অনেক রাজনীতিবিদের ধারণাও নেই পাকিস্তান নিজের দেশের মানুষের জন্য এবং বহির্বিশ্বের জন্যও একটা মারাত্মক বিপদ। তিনি বলেছেন, পাকিস্তানের সেনা এবং নির্বাচিত সরকারগুলির মধ্যে একটাই মিল। তা হল, এরা সবাই ভারতের ‘অন্ধ শত্রু’। এই শত্রুতা এতটাই একপেশে এবং অন্ধ যে ভারত সরকারের সাধারণ কথা বা বিবৃতিকেও বছরের পর বছর পাকিস্তানের প্রশাসন সন্দেহ করে থাকে। ভারতের সর্বনাশ এবং ধ্বংস কামনা করেন পাক প্রশাসনের কর্তারা। স্বাধীনতার পর থেকে এই মানসিকতা এবং চরিত্র পাকিস্তানের বদলায়নি। কারণ এটাই পাকিস্তানের সাধারণ চরিত্র। তবে এতে যে আখেরে তাদেরই আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে তা বোঝার মতো অবস্থাতেই নেই ইসলামাবাদ। ইসলামকে ব্যবহার করে ভারতের সঙ্গে অন্ধ শত্রুতা বজায় রাখা এবং তা কার্যকর করার জন্য সন্ত্রাসবাদী তৈরি করাটাই পাকিস্তানের বেঁচে থাকার একমাত্র রসদ। পাকিস্তানি সেনা ও আইএসআইকে তীব্র আক্রমণ করে মোরেল বলেছেন, ভারতকে জব্দ করতে দুধ-কলা দিয়ে কালসাপ পুষেছে পাকিস্তান। ছোবল খেতেই হবে। এভাবেই নিজের ধ্বংস ডেকে আনছে ওরা। বারাক ওবামার আমলে সিআইএ-র ভারপ্রাপ্ত ডিরেক্টর ছিলেন মাইকেল মোরেল। ২০১১-য় পাকিস্তানের অ্যাবটাবাদে ওসামা বিন লাদেনকে খতম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তাঁর।
সম্প্রতি কূটনীতিক কার্ট ক্যাম্পবেল এবং ভারতে নিযুক্ত প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রদূত রিচার্ড ভার্মার সঙ্গে একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি। সেখানেই তিনি পাকিস্তানকে তুলোধোনা করেন। মাইকেল মোরেল বলেন, ‘‘ভারতের সামনে বিপন্ন বোধ করে পাকিস্তান। অস্তিত্ব সঙ্কটে ভোগে। তাছাড়া আফগানিস্তানের উপরও ভারত প্রভাব খাটায়, সেই ভয়ও রয়েছে। ভারতকে ‘হাজার ক্ষতে রক্তাক্ত’ করতে তাই বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন তৈরি করেছে তারা। কিন্তু এভাবেই নিজেদের বিপদ ডেকে এনেছে ইসলামাবাদ। শেষমেশ তাদের ফল ভুগতেই হবে। এই মুহূর্তে পাকিস্তানের চেয়ে বিপজ্জনক দেশ বোধহয় আর একটাও নেই।’’ তিনি বলেন, সন্ত্রাস দমনে এতদিন মার্কিন সরকারের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকার অনুদান পেলেও, কোনও পদক্ষেপ করেনি পাক সরকার। বরং লস্কর-ই-তইবা, জইশ-ই-মহম্মদ, আল কায়দা, ইসলামিক স্টেটের মতো জঙ্গি সংগঠনগুলি দিন দিন ফুলে ফেঁপে উঠেছে। পাকিস্তানের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। চিনের কাছে গলা অবধি ঋণে ডুবে গিয়েছে পাকিস্তান। কার্যত চীনের উপনিবেশে পরিণত হয়েছে সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর পাকিস্তান। এই অবস্থায় আগামী ৫০ বছরের মধ্যেও পাকিস্তানের ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। কোনও ম্যাজিকেই সম্ভব নয়। আশঙ্কা করা হচ্ছে, নিজেদের গদি বাঁচাতে, অস্তিত্ব রক্ষা করতে আফগানিস্তান এবং ভারতের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে নামবে ইসলামাবাদ। তাতে ইন্ধন থাকবে জঙ্গি সংগঠনগুলির। যুদ্ধে যাওয়ার ভুল করলে তা হবে পাকিস্তানের শেষ দিন।
তাহলে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ কী? মোরেলের ব্যাখ্যা, আগামী ১০ বছরের মধ্যে পাকিস্তান জুড়ে ‘আরব বসন্ত’ আন্দোলন শুরু হলে অবাক হবেন না বলেও জানান মোরেল। তিনি বলেন, ‘‘উগ্রপন্থা পাকিস্তানের অলিগলিতে ঢুকে পড়েছে। এমনকি দেশের সেনাবাহিনীতেও প্রবেশ করেছে। তাই আগামী পাঁচ-দশ বছরে আরব বসন্তের মতো আন্দোলনের জেরে কোনও সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের উগ্রপন্থী সরকার গঠিত হলে অবাক হব না। পাকিস্তান পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র। ভবিষ্যতে ওই ‘সন্ত্রাসবাদী পরিচালিত সরকারের’ হাতে পরমাণু অস্ত্র পৌঁছলে, পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠবে। তিনি বলেন, পাক অর্থনীতির কোনও ভবিষ্যৎ নেই। পাকিস্তানে কর্মসংস্থান, শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য কিচ্ছু নেই। এই পরিস্থিতির বদল আনা ৩০ বছরেও সম্ভব নয়। কারণ পাকিস্তানের ধর্মান্ধ মানুষের, সে দেশের অসহায় সরকারের প্রত্যেকের ‘মাইন্ড সেটআপ’ টাই বিষাক্ত। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাও একেবারে মুখ থুবড়ে পড়েছে। পাকিস্তানের ৯০ শতাংশ পরিবারের ছেলেমেয়েদের মাদ্রাসা পাঠাতে বাধ্য হন অভিভাবকরা। পরবর্তীকালে ওই ছেলেমেয়েরাই জঙ্গি দলে নাম লেখায়। আর পাকিস্তানের সব ক্ষমতা, দাপট ভোট করেন সেনাকর্তারা।
তথ্যসূত্র:সংবাদ প্রতিদিন