রবিউল ইসলাম সোহেল: সাম্প্রতিক সময়ে থাইল্যান্ডে সৌদী মেয়ে রাহাফ-এর আশ্রয় প্রার্থনা, পরে কানাডায় আশ্রয় নেয়া নিয়ে বিশ্বজুড়ে সংবাদমাধ্যমে বেশ হৈ চৈ হয়েছে। রাহাফ নাকি এখন কানাডায় মদ, গাঁজা আর শূকরের মাংসে বুঁদ হয়ে থাকেন। এ ছাড়া পোশাক-আশাকেও বেশ খোলামেলা এমন ছবি পোস্ট দিয়েছেন সামাজিক মাধ্যমে। সৌদি থেকে এখন অনেক মেয়ে পালিয়ে ইউরোপ অথবা অন্যদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। তারা স্বাধীনভাবে নিজেকে মেলে ধরতে এসব দেশে পাড়ি দিয়ে আশ্রয় চাচ্ছেন। সৌদি থেকে প্রতি বছর শতাধিক নারী-পুরুষ পালিয়ে পশ্চিমা দেশ যুক্তরাজ্যে আশ্রয় নেয়।
পালিয়ে যাওয়া এসব নারীরা দাবি করছে, পারিবারিক নির্যাতনের কারণে তারা পালিয়ে যায় তবে নিপীড়নের ভয়ে দেশে ফিরে আসেন না। তাদের সবচেয়ে প্রিয় দেশ যুক্তরাজ্য সেখানে প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক নারী-পুরুষ আশ্রয় চান। তারা সেখানে গিয়ে মদ আর গাঁজায় বুঁদ হয়ে থাকেন। অনেকে ধর্ম ত্যাগ করে পশ্চিমাদের সঙ্গে তাল মেলান।
বিবিসি এক প্রতিবেদনে পালিয়ে আসা আসা এমন দুজনের সঙ্গে কথা বলেছেন। যারা কী ধরনের ঝুঁকি নিয়ে দেশটি থেকে পালিয়ে এসেছেন।
সৌদি আরবের অভিভাবকত্ব আইন অনুযায়ী নারীদের অবশ্যই পুরুষ আত্মীয়দের থেকে অনুমতি নিতে হয়। যেমন স্বামী, বাবা বা ছেলে। এদের অনুমতি নিয়ে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে হয় ভ্রমণ অথবা বিয়ের জন্য।
ছদ্মনাম রাওয়ান যিনি প্রতিবছর সৌদি আরব থেকে পালিয়ে যাওয়া ১০০ নারীর মধ্যে একজন। রাওয়ান বিবিসিকে তার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। তিনি বলেন, আমি যে মুহূর্তে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে সৌদি থেকে পালিয়ে যাব, ঠিক কীভাবে পালিয়ে যাব জানি না। আমি এক বছর আগে ইসলাম অস্বীকার করি। আমি তখন চাপের মুখে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান করতে বাধ্য হই কিন্তু আমি ইহা বিশ্বাস করি না।
আমার বাবা সিদ্ধান্ত দেন আমি কোথায় থাকব, কোথায় পড়ব বা কোথায় ভ্রমণ করব। আমার পরিবার থেকে যখন সাধারণ কোনো বিষয়ে চিন্তা করা হয় তখন আমি একজন নারী হিসেবে অপমানিত বোধ করি। আমার বাবা আমার জীবন নিয়ন্ত্রণ করেন অভিভাবকত্ব আইনানুসারে।
রাওয়ান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেছে যে, আমি যে কোনো একটি উপায় খুঁজছি এখান থেকে বের হতে।
আমি জানি না কীভাবে সৌদি থেকে এসে এখানে আশ্রয় চাইতে হয়। আমি যুক্তরাজ্যে আসার আগে এক মাস গবেষণা করি। আমি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিভিন্ন মানুষের কাছে সাহায্য চাই কীভাবে সৌদি থেকে যুক্তরজ্যে আশ্রয় চাওয়া হয়। তারা আমাকে সবক্ষেত্রে সাহায্য করেছে। আমার পরিবার যখন বিদেশ ভ্রমণ থেকে সৌদি আরবে ফিরবে তখন যুক্তরাজ্যে আমার ফ্লাইট থামে। হিথ্রো বিমানবন্দর আমার পরিবার বাথরুমে ব্যবহার করতে ঢুকলে আমি জানি কয়েক মিনিটের জন্য সময় পাই।
বিমানবন্দরের কর্মীদের কাছে একটি নোট হস্তান্তর করি। এতে লেখা ছিল আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি। যখন পুলিশ আমার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে আমাকে ডেকে আমার মনের পরিবর্তন ঘটানোর চেষ্টা করে। কিন্তু আমি ইহা গ্রহণ করিনি।
আল-ওতাবি নামে একজন যিনি রাওয়ানের ভ্রমণ পরিকল্পনার ব্যাপারে সহযোগিতা করেছিলেন।
তিনি সৌদি আরব থেকে পালিয়ে যুক্তরাজ্যে আশ্রয় চেয়েছেন। তিনি পালিয়ে আসাদের সাহায্য করে থাকেন। আমি গত বছর ৯-১০ সৌদি নারীকে সাহায্য করেছি, যারা সৌদি আরব থেকে পালিয়ে এসেছেন। যারা বিদেশে ভ্রমণ করতে এসেছিলেন।
যখন কেউ সৌদি আরব থেকে যুক্তরাজ্যে এসে পৌঁছায় আমি তাদের স্থানীয় এনজিওর সঙ্গে সম্পূর্ণ সাক্ষাৎ করিয়ে দেই।
কিন্তু আমি তাদের থাকার বা অর্থনৈতিক সাহায্য করতে পারি না। আল-ওতাবি এক বছর আগে পালিয়ে এসে যুক্তরাজ্যে সাহায্য চেয়েছেন।
তিনি বলেন, সৌদি আরবে পুরুষদের জন্যও জীবন চালানো কঠিন। আমার বাবা অনেক কঠিন। আমাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেন। আমি কিছুদিন মানসিক সমস্যায় ভুগি। আমি আত্মহত্যার জন্য নিজেকে স্থির করি।
আমি খ্রিস্টান ধর্মের জন্য কথা বলি কিন্তু সৌদি সরকার এটাকে পছন্দ করে না। আমি এসব কথা রেকর্ড করে রাখি যা আমার জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। সেখানে রাজনীতির বিরুদ্ধেও কথা বলা নিষেধ।
বিপুলসংখ্যক সৌদি আরবের বাসিন্দা যুক্তরাজ্যে আশ্রয় খুঁজছেন, যা রীতিমতো বাড়ছে। যেটি ২০১৪ সালে ছিল ১৮ এটি ২০১৭ সালে ৩৮ জনে দাঁড়িয়েছে। রাওয়ানা কখনো সৌদি আরবে ফিরে যাওয়ার কথা চিন্তাই করতে পারছেন না।
আমি এখানে স্বাধীনতা পেয়েছি যা আগে কখনো চিন্তা করতে পারি নাই। আমার জীবনের ওপর কোনো কর্তৃত্ব নেই। আমি আমার জীবনের পরিকল্পনার সিদ্ধান্ত নিতে পারি। আমি সৌদি আরবে ফিরে যেতে চাই না।
তথ্যসূত্র: বিবিসি