প্রেসিডেন্ট ট্র্যাম্প শেষপর্যন্ত জরুরি অবস্থা জারি করেছেন। মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের অর্থ বরাদ্দের জন্য কংগ্রেসকে এড়াতে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেন। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে ট্রাম্প টিভিতে সম্প্রচারিত এক ঘোষণায় বলেন, মেক্সিকো থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্ত দিয়ে মাদক, অপরাধী এবং অবৈধ অভিবাসীর ঢল ঠেকিয়ে দেশকে সুরক্ষিত রাখতে তিনি জরুরি অবস্থার আদেশে সই করছেন। বিবিসি। তবে বিষয়টি ভালোভাবে নিচ্ছে না ডেমোক্র্যাটরা। প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, জরুরি অবস্থা জারি হলে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বড় মাত্রায় ‘অস্বস্তিকর’ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সীমান্তের ওই পরিস্থিতিকে জাতীয় নিরাপত্তায় অনেক বড় হুমকি উল্লেখ করে ট্রাম্প তা ঠেকাতে ‘দেয়াল কাজে আসবে’ বলে দাবি করেন। জরুরি অবস্থা জারির ফলে ট্রাম্প সামরিক কিংবা দুর্যোগ খাতের মতো বিভিন্ন খাত থেকে অর্থ দেয়াল নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দিতে পারবেন। ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে এ নিয়ে মতদ্বৈততায় গত বছরের শেষ থেকে টানা ৩৫ দিন কেন্দ্রীয় সরকারের এক-চতুর্থাংশ বিভাগ ও সংস্থায় ‘অচলাবস্থা’ দেখেছিল যুক্তরাষ্ট্র। আরেক দফা অচলাবস্থা এড়াতে কংগ্রেস সদস্যরা দেয়ালের জন্য ১৩০ কোটি ডলার বরাদ্দ দিতে সম্মত হলেও তা ট্রাম্পের মনমতো হয়নি। এ কারণেই তিনি জরুরি অবস্থা জারির নির্বাহী ক্ষমতা কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নিলেন, যাকে ‘ক্ষমতার বড় ধরনের অপব্যবহার’ এবং ‘বেআইনি কাজ’ বলে বর্ণনা করেছেন ডেমোক্র্যাটরা। বিবিসি জানিয়েছে, জরুরি অবস্থা জারির নির্দেশের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারে অচলাবস্থার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে একটি ব্যয় বিলেও ট্রাম্পের সই করার কথা রয়েছে। জরুরি অবস্থা জারির ফলে প্রেসিডেন্টের হাতে কিছু বিষয়ে অগাধ ক্ষমতা চলে এলো যা ব্যবহার করে তিনি কংগ্রেসকে পাশ কাটাতে পারবেন। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, এ ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে ট্রাম্প সামরিক খাতের নির্মাণ প্রকল্পের ৩৬০ কোটি ডলার, মাদকবিরোধী প্রকল্পের ২৫০ কোটি ডলার এবং ট্রেজারি বিভাগের ৬০ কোটি ডলার দেয়াল নির্মাণে বরাদ্দ দিতে পারবেন। আর এর সঙ্গে যোগ হবে বৃহস্পতিবার রাতে কংগ্রেসের পাস করা ১৩৭ দশমিক ৫ কোটি ডলারের প্যাকেজ। সব মিলে দেয়াল নির্মাণের জন্য ট্রাম্পের হাতে চলে আসবে প্রায় ৮০০ কোটি ডলার। যদিও সীমান্তের ২ হাজার মাইলজুড়ে দেয়াল নির্মাণের মোট খরচ ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের তুলনায় এ তহবিল অনেকটাই কম। ট্রাম্পের দাবি, মেক্সিকো সীমান্তের বর্তমান অবস্থাই ‘জরুরি অবস্থা’ জারির পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। গত নভেম্বরে প্রতিদিন দুই হাজারের বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীকে ওই সীমান্ত থেকে হয় ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে, নয়তো গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে ট্রাম্প সমর্থকরা সীমান্ত পরিস্থিতিকে ‘চরম সংকটপূর্ণ অবস্থা’ অ্যাখ্যা দিলেও তাদের সঙ্গে একমত নন ট্রাম্পবিরোধীরা।
বিরূপ প্রতিক্রিয়া : এ ব্যাপারে ডেমোক্র্যাটিক দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা এটাকে প্রেসিডেন্টের ‘ক্ষমতার বড় ধরনের অপব্যবহার’ ও ‘বেআইনি কর্মকা-’ বলে মন্তব্য করেছেন। কারণ প্রেসিডেন্ট একই সঙ্গে কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে সেনা খাতের বরাদ্দ দেয়াল নির্মাণ খাতে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ডেমোক্র্যাটরা এ পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করে এর মাধ্যমে ট্রাম্প ‘ক্ষমতার চূড়ান্ত অপব্যবহার’ ও ‘বেআইনি কার্যক্রম’ করতে যাচ্ছেন বলে সতর্ক করেছেন।
পর্যবেক্ষকদের ধারণা, রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জরুরি অবস্থা জারি করলে তা আইনি প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে পারে। এদিকে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ও সিনেটের ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমার এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, জরুরি অবস্থা জারি হবে একটি বেআইনি কাজ, প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার চূড়ান্ত অপব্যবহার। এটি হবে তার দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভাঙার একটি মরিয়া চেষ্টা, যেখানে দেয়াল নির্মাণের অর্থ মেক্সিকোর কাছ থেকে আদায়ের কথা দিয়েছিলেন তিনি। তিনি মেক্সিকোকে রাজি করাতে পারেননি। মার্কিন কংগ্রেস যে কোনো মূল্যে ‘সাংবিধানিক কর্তৃত্বকে রক্ষা করবে’ বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তারা।