রবিউল ইসলাম সোহেল: যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর কর্তৃক আয়োজিত বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো গত ৬ ও ৭ জানুয়ারি 'ঢাকা ক্যাটেল এক্সপো-২০২৩ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ ক্যাটেল ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন এই মেলা বাস্তবায়নে কাজ করেছে।
প্রধানমন্ত্রীর 'একটি বাড়ি একটি খামার' প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্য ও যুব সমাজকে আত্মকর্মসংস্থান তৈরিতে উৎসাহিত করার জন্য এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে বলে মেলার সাথে সম্পর্কিত সূত্রগুলো জানিয়েছে। বিশাল আগ্রহ আর উদ্দীপনার মধ্যে ঢাকার আগারগাঁও পুরানো বাণিজ্য মেলার মাঠে প্রায় ৩ লাখ ৬০ হাজার বর্গফুট এলাকা নিয়ে অনুষ্ঠিত ২দিনব্যাপী এই এক্সপোতে বিপুলসংখ্যক দর্শক ছাড়াও খামার ব্যবসার সাথে জড়িতরা উপস্থিত হয়েছিলেন।
প্রদর্শনীর উদ্বোধন করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘দেশীয় উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে এখন আর গরুর জন্য ভারতনির্ভর নয় বাংলাদেশ। আমরা ক্যাটেলে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি।’ যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ হাসান রাসেল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চাকরিদাতা হতে যুবকদের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা কেন চাকরির পেছনে ছুটবো! আমরা এমন কিছু কাজ করবো যে কাজ করে আমরা নিজেরা নিজের বস হবো। আমরা অন্যদেরকে চাকরি দেব।’
'ঢাকা ক্যাটেল এক্সপো-২০২৩ নামের এই মেলায় বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মোট ১৫০ জন খামারী তাদের খামারের সেরা গরু নিয়ে অংশগ্রহণ করছে। মেলাতে দেশের সেরা ১২ জাতের গরু প্রদর্শিত হয়েছে। যার মধ্যে ছিল দেশী, নর্থ বেঙ্গল গ্রে, রেড চিটাগাং ক্যাটেল (আরসিসি), মিরকাদিম/মুন্সিগঞ্জ, পাবনা, শাহিওয়াল/সিন্ধি, হলিস্টেন ফ্রিজিয়ান/জার্সি, ব্রাহমান/ ক্রস ব্রাহমান, মহিষ/মুররা/নিলিরাডি/জাফরাবাদি/আলবিনো, ভুট্টি/বামণ খাসি ছাগল, ভেড়া/দুম্বা। এছাড়াও উন্নত জাতের ৪০০টি পশু গরু (২০০টি), ছাগল, মহিষ, ভেড়া ও দুম্বা প্রদর্শিত হয়েছে। আরো ছিল ৩০টি স্টল যেগুলোতে খামারসংশ্লিষ্ট অ্যাগ্রো টুলস কোম্পানি, ওষুধ কোম্পানি, গোখাদ্যের কোম্পানি নিজেদের পণ্য প্রদর্শনের জন্য তুলে ধরেছে। মেলায় মোট স্টল সংখ্যা ১৫০টি। এছাড়া রেজিস্ট্রেশন বুথ ছিলো ৮টি। মেলায় সেমিনার ও আলোচনা সভারও আয়োজন ছিল।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় মেলায় অংশগ্রহণকারী খামারীদের মধ্যে থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী খামারীদের
সনদ প্রদান করেছে। দুই দিনব্যাপী মেলায় মোট চারটি সেশন হয়েছে। প্রতিটি সেশন পরিচালনা করেছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রশিক্ষকবৃন্দ। মেলার প্রথমদিনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এমপি, মাননীয় মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এছাড়া মো. আজহারুল ইসলাম খান, মহাপরিচালক (গ্রেড-১) যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, মো. আখতার হোসেন, সাবেক সিনিয়র সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ড. মহিউদ্দীন আহমেদ, সচিব, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়।
মেলার দ্বিতীয় দিনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টিপু মুনশি এমপি, মন্ত্রী, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ড. মহিউদ্দীন আহমেদ, সচিব, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, মেজবাহ উদ্দিন, সাবেক সচিব, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় । মো. আজহারুল ইসলাম খান, মহাপরিচালক (গ্রেড-১) যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর। মেলার দ্বিতীয় দিনে গবাদি পশু মূল্যায়নের উপর মোট ১০৮টি ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। এই অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেছেন মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, প্রতিমন্ত্রী, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়।
মেলার শেষ দিনে বিভিন্ন ক্যটাগরিতে ১০৮ জন খামারিকে পুরুষ্কৃত করা হয়। কয়েকটি ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান পেয়ে নারায়ণগঞ্জের আর. কে এগ্রো ফার্ম গ্রান্ড চ্যাম্পিয়ন ট্রফি লাভ করে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, হৃষ্ট-পৃষ্টকরণ খামারী পেশা আজ বাংলাদেশের একটি শিল্পে পরিণত হয়েছে এবং এই পেশার সাথে আজ বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষ নিজেকে নিয়োজিত করেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের যুব সমাজ এর সাথে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। যার ফলে দেশে কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে এবং বিভিন্ন খারাপ কাজ থেকে যুব সমাজকে বিরত রেখে তাদের জনশক্তিতে রূপান্তর করা সম্ভব হচ্ছে। মেলায় হাজার হাজার জনসমাগম তৈরি হয়েছিল এবং একটি উৎসবমুখর পরিবেশে সবাই মেলা উপভোগ করে।
মেলায় অধিক মাংস উৎপাদনের জন্য বিজ্ঞানসম্মত পশুপালনসম্পর্কিত কর্মশালা, ভেটেরিনারি প্রশিক্ষণ ছাড়াও ছিল ভিন্নধর্মী আকর্ষণ ‘গরুর র্যাম্প শো’, র্যাফেল ড্রসহ আরো নানা আয়োজন। সর্বোপরি একটি আনন্দমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিলো। আয়োজকদের পক্ষ থেকে এই মেলা সুন্দরভাবে সম্পন্ন হওয়ায় সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। শিগগিরই ঢাকা ক্যাটল এক্সপো সিজন ২ অনুষ্ঠিত হওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন তারা।
মেলার আয়োজক কমিটিতে ছিলেন: ১. মোঃ মাসুদুল ইসলাম জিসান, এম.ডি. ডেইরি সান প্রাইভেট লিমিটেড ২. মোঃ মোশিউর রহমান খান, মোহাম্মদ এসো ৩. মো: কামরান আহাম্মেদ রাগীব, আর কে এগ্রো ফার্ম লিমিটেড ৪| মো: রমজান আলী ড্যানী, আল মদিনা ক্যাটল ফার্ম, ৫. আহম্মেদ সামসুদ্দীন তপু, এস এন এস এগ্রো ৬. মোঃ লুৎফুর রহমান স্বপন, এস এস ক্যাটেল ফার্ম ৭. নূর আলম সিদ্দিক শিহান, আর এন্ড এস ক্যাটেল রেঞ্জ প্রমুখ।