ঢাকা, বাংলাদেশ  |  শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪



  বিভাগ : জাতীয় তারিখ : ১৯-১০-২০২১  


ই-কমার্স নিয়ে প্রতারণা!


  রবিউল ইসলাম সোহেল



রবিউল ইসলাম সোহেল: ই-কমার্স নিয়ে দেশে চরম আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জের মতো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য কেনার জন্য আগাম টাকা পরিশোধ করে প্রতারিত হয়েছেন লাখ লাখ গ্রাহক। তারা সময়মতো পণ্য বা টাকা কোনোটাই পাননি। এখন পরিশোধ করা টাকা বা সরবরাহ করা পণ্যের মূল্য ফেরত পাবেন কিনা, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে গভীর অনিশ্চয়তা। কারণ, ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জের মত বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীরা গ্রেপ্তারের পর তাদের কর্মকাণ্ডের দায় কেউই নিতে চাইছে না। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিনিয়োগ করে প্রতারিত গ্রাহকেরা অর্থ ফেরত পাবেন কিনা, সেই নিশ্চয়তা দিতে পারেনি সরকার। ইভ্যালির টাকা সরকার ফেরত দেবে কিনা, সেই প্রশ্নে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘টাকা সরকার নেয়নি। এটির লাভের ভাগীদারও সরকার না।’ অর্ধেক দামে পণ্য কিনতে অনেকে ইভ্যালিতে বিনিয়োগ করেছে জানিয়ে এর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘মানুষকে লোভ সংবরণ করতে হবে। ই-কমার্স নীতিমালা অনুযায়ী পণ্য না পেয়ে লেনদেন করা যাবে না।’
যদিও দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের নীতিমালা প্রণয়নে কাজ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তারা ইতোমধ্যে ই-কমার্সের নিয়ম তৈরি করে একটি নির্দেশিকাও তৈরি করেছে। ভোক্তা অধিকার রক্ষায় রয়েছে নির্দিষ্ট অধিদপ্তর। অস্বাভাবিক লেনদেন এবং পরিশোধ ব্যবস্থা দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আবার ই-ক্যাব নামে এ খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠনও আছে। কিন্তু কোনো পক্ষই ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জসহ অন্যান্য স্কিম পরিচালনাকারী ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের পাওনা টাকা ফেরতের কোনো পথ দেখাতে পারছে না।
বড় প্রতিষ্ঠান ছাড়াও ফেসবুককেন্দ্রিক শত শত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতিদিনই প্রতারণা করে যাচ্ছে। এখন ই-কমার্সে অভিযোগের পরিমাণ আগের চেয়ে বহু গুণ বেড়ে গেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে ই-কমার্স এখন সম্প্রসারণের পথে। এখনই এমন ধাক্কা সাধারণ গ্রাহকদের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি করতে পারে। ফলে সরকারকে দ্রæতই এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে।
বর্তমান সময়ের আলোচিত এই বিষয় নিয়ে আমাদের এবারের প্রচ্ছদ কাহিনি। প্রতিবেদনটি তৈরি করতে উইকিপিডিয়া, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ, অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত তথ্যসমূহের সহায়তা নেয়া হয়েছে।

ই-কমার্সের ইতিহাস ও বর্তমান অবস্থা
বাংলাদেশের ই-কমার্স বা ই-বাণিজ্য বলতে বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক সিস্টেম (ইন্টারনেট বা অন্য কোন কম্পিউটার নেটওয়ার্ক) এর মাধ্যমে পণ্য বা সেবা ক্রয়/বিক্রয় ব্যবস্থাকে বুঝানো হয়। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক অনলাইন পেমেন্ট অনুমোদন করেছিল এবং ২০১৩ সালে ব্যাংক অনলাইন পেমেন্টের জন্য ডেবিট এবং ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার অনুমোদন দিয়েছিল। ই-কমার্স এসোসিয়েশান অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)’র মতে, শুধুমাত্র ফেসবুকেই ৮০০০ ই-কমার্স পৃষ্ঠা রয়েছে। ২০২০ সালের একটি প্রতিবেদন অনুসারে বাংলাদেশে ই-কমার্স সাইটের মাধ্যমে ১৫ বিলিয়ন টাকা মূল্যের লেনদেন হয়।

বাংলাদেশের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে নানা রকম অভিযোগ উঠে। পণ্য কিনে ভোক্তাদের ঠকে যাওয়া, বিক্রেতা কর্তৃক নিম্নমানের পণ্য প্রদান, টাকা নিয়ে পণ্য না দেওয়া, পণ্য বিক্রির পরেও গ্রাহক কর্তৃক পণ্য গ্রহণ না করা বা ফিরিয়ে দেওয়াসহ কিছু ই-কমার্স কোম্পানির অনেকটা ব্যাংকের মতো আচরণ করার অভিযোগও পাওয়া গেছে। এমত অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংক ৩০ জুন ২০২১ পেমেন্ট নীতিমালা সার্কুলার জারি করে। ২০২১ সালে বাণিজ্য মন্ত্রনালয় ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা-২০২১ নামক তিন অধ্যায়ের নীতিমালা প্রকাশ করে।

ই-কমার্স খাতকে শৃঙ্খলায় আনতে গত ২৫ সেপ্টেম্বর বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে যেসব সুপারিশ এসেছে, সেগুলোর অধিকাংশই বাস্তবায়ন আগামী তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে করা যাবে। তবে এর মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন সংশোধনে এক বছর এবং নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ গঠনে দুই বছর লাগবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ওই বৈঠকের অন্য সুপারিশের মধ্যে রয়েছে ডিজিটাল কমার্স আইন প্রণয়ন, কেন্দ্রীয় অভিযোগ নিষ্পত্তি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি এবং ইউনিক আইডেনটিফিকেশন নম্বর পদ্ধতি প্রচলন। এ বিষয়ে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, সরকারের পক্ষে পাওনাদারদের টাকা ফেরত দেওয়াটা কঠিন। একমাত্র সম্ভব যদি কেউ মামলা করেন এবং আদালত যদি কোনো আদেশ দেন। সে ক্ষেত্রে যিনি ফেরত দেবেন, তাঁর সম্পদ থাকতে হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে সম্পর্কিত সূত্রগুলো মতে, ধাপে ধাপে সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। সবার আগে হাত দেওয়া হবে ইউনিক আইডেনটিফিকেশন নম্বর পদ্ধতি চালু করার ব্যাপারে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় ই-কমার্স সেল থেকে এই নম্বর দেওয়া হবে। এরপর কেন্দ্রীয় অভিযোগ নিষ্পত্তি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি চালুর কাজটি হতে পারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের আওতায়। সে ক্ষেত্রেও আইন সংশোধনের দরকার হবে। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দণ্ডবিধি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংক মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন সংশোধন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ই-কমার্স নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠন আইন ও ডিজিটাল কমার্স আইন প্রণয়নের কাজ করবে। ই-কমার্স নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠন আইন প্রণয়নের পরই গঠিত হবে ই-কমার্স নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। সে ক্ষেত্রে এর নাম হবে ই-কমার্স উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ।

হতে পারে, কর্তৃপক্ষ গঠনের পরিবর্তে আইন সংশোধন করে বরং ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে শক্তিশালী করা হবে। আইন প্রণয়নের ব্যাপারে বৈঠক, খসড়া তৈরি, মন্ত্রিসভার অনুমোদন, আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং, সংসদ থেকে পাস-এক থেকে দেড় বছরের ঘটনা। এরপর কর্তৃপক্ষ গঠন, জনবল কাঠামো অনুমোদন, জনবল নিয়োগ ইত্যাদি কাজে যাবে আরও এক বছর। তবে যে গ্রাহকেরা পণ্য ক্রয়ের আদেশ (অর্ডার) দিয়ে ইতিমধ্যে বিপদে আছেন এবং যে মার্চেন্টরা বাকিতে পণ্য দিয়ে আটকা পড়েছে, তাদের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারের কোনো দপ্তরের আপাতত কোনো চিন্তা নেই। তাই প্রশ্ন উঠেছে, গ্রাহক-মার্চেন্ট মিলিয়ে অন্তত পাঁচ লাখ পাওনাদার যখন অনিশ্চয়তায়, তখন গ্রাহকদের পাওনা ফেরতের কী হবে? সরকারের কোনো দায় কি নেই?

ই-কমার্স খাত নিয়ে বিরাজমান অস্থিরতা থেকে উত্তরণের পথ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছেন সে ধরনের লোকেরাই, যাঁরা লোভের বশে কম দামে পণ্য কিনেছে বা কিনতে চেয়েছেন। গ্রাহকের অতি লোভ এবং ভুল সিদ্ধান্তের পরিণতি এখন সেই গ্রাহককেই ভোগ করতে হবে। ই-কমার্স একটি ভার্চ্যুয়াল মুদির দোকান। মুদির দোকানে নজরদারি করা সরকারের কাজ নয়। তবে অভিযোগ ওঠার পর সরকার কিন্তু চুপ করে বসে থাকেনি। শুধু ই-কমার্স নয়, কোনো বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের এ ধরনের পতনের ব্যাপারে সরকার এগিয়ে এসেছেÑবিশ্বের কোথাও এমন উদাহরণ নেই। ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ বা ধামাকার মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকাণ্ড একধরনের রাষ্ট্রীয় অপরাধ। অথচ সব সংস্থাই এখন দায় এড়াচ্ছে। কে দায়ী নয়Ñএটা প্রমাণেই সবাই যেন ব্যস্ত এখন। অথচ চোখের সামনেই সব হয়েছে। অনেকটা কর ফাঁকির মতো। সুযোগ দিয়ে দিয়ে একটা পর্যায়ে গিয়ে বলা হলো, কর ফাঁকি হয়েছে।

সূত্রগুলোর মতে, ইভ্যালি এখন গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছে ৫৪৩ কোটি টাকার দেনাদার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে ইভ্যালি গত মাসে যে হিসাব দিয়েছে, তাতে তাদের কাছে ২ লাখ ৭ হাজার ৭৪১ জন গ্রাহকের ৩১১ কোটি টাকা পাওনার কথা বলা হয়েছে। আর মার্চেন্টরা (সংখ্যা অজানা) ইভ্যালির কাছে পায় ২০৬ কোটি টাকা।

গ্রাহকের অর্থ ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই
সবার চোখের সামনেই ঘটেছে। ধামাকা অফারের বিজ্ঞাপন ফলাও প্রচার করেছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো। তাদের ফাঁদে পড়ে গ্রাহকেরা যে প্রতারিত হতে পারেন, তা গণমাধ্যমে তুলে ধরে সতর্কও করা হয়েছে। এরপরেও ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম তদারকি করেনি নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রতারণায় কয়েক হাজার মানুষ যখন নিঃস্ব হতে বসেছেন, তখন ই-কমার্সের সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজছে সরকার।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘প্রতারণাকারী ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ৪০৬ ও ৪২০ ধারায় মামলার বিধান রয়েছে। এসব মামলা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কীভাবে অন্তর্ভুক্ত করা যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মামলা হওয়ার পরেও ডেসটিনি, যুবকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকেরা টাকা ফেরত পায়নি। ইভ্যালির গ্রাহকদের টাকা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু-সেই প্রশ্নে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, যুবক, ডেসটিনি অনেক আগের ঘটনা। তাদের অনেক সম্পদ ছিল। ডেসটিনির কর্তাব্যক্তিরা কারাগারে আছেন। করোনা মহামারির মধ্যে দেশের লাখ লাখ মানুষ ই-কমার্স ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করেছে। ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, ধামাকাসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কারণে লাখ লাখ ব্যবসার ক্ষতি করার ইচ্ছা সরকারের নেই। যারা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে যাতে এই ব্যবসায় কেউ প্রতারণা করতে না পারে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ই-কমার্স ব্যবসা কীভাবে পরিচালনা করা হবে সে বিষয়ে প্রচার চালাতে হবে জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকেই লোভের বশবর্তী হয়ে এক টাকার পণ্য বারো আনায় কিনেছেন। অনেকে লোভের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।’

মন্ত্রী জানান, ইভ্যালির ৫০০ কোটি টাকা দায় রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বিজ্ঞাপনে প্রচুর টাকা ব্যয় করেছে। ইভ্যালির রাসেলের কাছে বর্তমানে ৮০-৯০ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে বলে তাঁরা শুনেছেন। ইভ্যালির কী পরিমাণ সম্পদ আছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযোগ পাওয়ার পর সরকার তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে। গ্রাহকদের টাকা কীভাবে পরিশোধ করবে তা নিয়ে রাসেলের সঙ্গে আইনগত পথ অনুসরণ করে কথা বলতে হবে। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সেসব প্রতিষ্ঠানের মালিকদের জেলে পাঠালে গ্রাহকদের কোনো লাভ হবে না বলে মনে করেন বাণিজ্যমন্ত্রী। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোতে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, কাউকে জেলখানায় পাঠিয়ে দিলে তো কোনো লাভ নেই। সে জেল খেটেই শেষ, এতে কোনো উপকার হবে না। আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করে একটা সমাধান বের করব।

ইভ্যালির বিরুদ্ধে গ্রাহকেরা ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরে ৪ হাজার ৯৩২টি অভিযোগ দিয়েছিলেন। তার মধ্যে ৮৪ শতাংশ অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে বলেও জানান বাণিজ্যমন্ত্রী। এদিকে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করায় এর দায় প্রাথমিকভাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওপর চাপিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসব প্রতিষ্ঠান করার সময় কারও না কারও ছাড়পত্র নিয়েই করা হচ্ছে। এখানে ছাড়পত্র দিচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তাদের প্রাথমিক দায়িত্ব নিতে হবে।

প্রতারণার রকমফের: চ্যালেঞ্জের মুখে ই-কমার্স
সম্প্রতি ই-অরেঞ্জের মালিক সোনিয়া মেহজাবিন, তার স্বামী মাসুকুর রহমানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এই প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষক বনানী থানার ওসি তদন্ত শেখ সোহেল রানা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় ভারতে গ্রেফতার হয়েছেন। এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গ্রাহকের ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে ‘নিরাপদ ডটকম’ নামের একটি ই-কমার্স সাইটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকেও (সিইও) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শাহরিয়ার খান নামে ঐ ব্যক্তি ই-কমার্স সাইট খুলে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সাধারণ গ্রাহকদের আকৃষ্ট করেন। ৫০ শতাংশ মূল্য ছাড়ে মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ফ্রিজ, ওভেনসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক পণ্য ৩০ দিনের মধ্যে হোম ডেলিভারি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেন।
ই-ভ্যালির বিরুদ্ধেও গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পণ্য না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো গ্রাহক তাদের অফিসের সামনে ভিড় করছেন। কিন্তু প্রতারিত গ্রাহকদের জন্য কোনো সুখবর দিতে পারছেন না কেউ। বেসিস সভাপতি আলমাস কবীর গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পণ্য দিচ্ছে না, এটা সত্য। এখন এদের গ্রেফতার করে জেলে ভরলে তো গ্রাহক টাকা ফেরত পাবেন না। আমার পরামর্শ হলো, এসব প্রতিষ্ঠানে সরকারের তরফ থেকে প্রশাসক বসিয়ে তাদের যে সম্পদ আছে সেটা বিক্রি করে সব টাকা দেওয়া না গেলেও যতটা সম্ভব টাকা গ্রাহকদের দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।’
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল ওয়াহেদ তমাল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে যে সার্কুলার জারি করা হয়েছে, সেটা যদি সবাই মানেন তা হলে এখানে প্রতারণা অনেক কমে যাবে। আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে যেটা করছি, সেটা হলো যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের ডেকে সমাধান করতে বলছি। না করলে মন্ত্রণালয়ে আমরা লিখিতভাবে জানাচ্ছি, পাশাপাশি তারা আমাদের সদস্য হলে তাদের সদস্যপদও স্থগিত করছি। আমরাও চাই এই সেক্টরে দ্রুত শৃঙ্খলা ফিরে আসুক।’

সম্পর্কিত সূত্রগুলোর মতে, করোনা মহামারির শুরু থেকে যে কয়েকটি খাতে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ করা গেছে তার মধ্যে ই-কমার্স একটি। বছরের ব্যবধানে এ খাতে লেনদেন বেড়েছে ৭০০ কোটি টাকারও বেশি। বর্তমানে ই-কমার্সের বাজার ২০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা গত বছরের ডিসেম্বরেও ছিল ১৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা। জানা যায়, ২০১৬ সালের পর থেকে দেশে ই-কমার্স ব্যবসার প্রবৃদ্ধি হতে শুরু করেছে। ২০১৭ সালে ই-কমার্স বাজারের আকার ছিল ৮ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের শেষে গিয়ে দাঁড়ায় ১০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ বিডিজবসের প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম মাশরুর গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের দেশে তো ই-কমার্স কেবল সম্প্রসারণ হতে শুরু করেছে। এটা আরও বহুদূর যাবে। কিন্তু তার আগে যে প্রতারণা ঘটনাগুলো ঘটেছে সেগুলোর সুরাহা করতে হবে। কোনো গ্রাহক এই প্ল্যাটফরমে পণ্য কিনতে এবার প্রতারণার শিকার হলে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন। ফলে যারা প্রতারণা করেছে, তাদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে এ ধরনের প্রতারণা সামনের দিনে ঘটতেই থাকবে।’ ফেসবুককেন্দ্রিক শত শত প্রতিষ্ঠানের প্রতারণা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আপনি তো ফুটপাতে কোনো পণ্য কিনতে গিয়ে ঠকতে পারেন। ফেসবুকেরটা হলো ফুটপাতের মতো। কিন্তু মূল যারা ই-কমার্স ব্যবসা করছে তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’

সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের (সিসিএ ফাউন্ডেশন) ‘সাইবার ক্রাইম ট্রেন্ড ইন বাংলাদেশ ২০২০’ শীর্ষক বার্ষিক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর সারা দেশে যত ধরনের সাইবার অপরাধ হয়েছে, তার মধ্যে ১১ দশমিক ৪৯ শতাংশই অনলাইনে পণ্য কিনতে গিয়ে প্রতারণার ঘটনা। প্রতারিত হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছর। আর দশমিক ৯২ শতাংশের বয়স ১৮ বছরের কম। গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, পুরুষরাই অনলাইন কেনাকাটায় বেশি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। প্রতারিতদের মধ্যে পুরুষ ৭ দশমিক ৩৮ আর নারী ৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ।

বেসিস সভাপতি আলমাস কবীর বলেন, ‘ই-কমার্সে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, গ্রাহককে সচেতন হতে হবে। এখন যেমন ক্যাশ অন ডেলিভারি সিস্টেম আছে। গ্রাহক যদি কেনাকাটার ক্ষেত্রে ক্যাশ অন ডেলিভারি করে কেনাকাটা করেন তা হলে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। যে কোনো পণ্য এখন চাইলেই ক্যাশ অন ডেলিভারি কিনতে পারেন। এভাবে কিনলে যে প্রতারক সে আপনাকে প্রোডাক্ট পাঠাবেই না। তা হলে তো আর আপনি প্রতারিত হবেন না।

শুধু সাধারণ মানুষ নয়, নগদের মতো এমএফএস প্রতিষ্ঠানও ই-কমার্সে প্রতারণার শিকার হয়েছে। কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে নগদের বড় অঙ্কের টাকা নিয়ে গেছে ঐ প্রতিষ্ঠানগুলো। এ কারণে নগদের প্রায় ১২ হাজার গ্রাহকের একাউন্ট বন্ধ করতে হয়েছে। কীভাবে এই টাকা উদ্ধার করা যায় সে চেষ্টা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে ২ হাজারের বেশি ওয়েবসাইটভিত্তিক এবং প্রায় ১ লাখের মতো ফেসবুকভিত্তিক ই-কমার্স সাইট চালু রয়েছে।

প্রতারণার দায় কার
সরকারি সংস্থাগুলোর বক্তব্য, ইভ্যালিসহ কিছু প্রতিষ্ঠান ব্যবসার যে মডেল অনুসরণ করেছে, তাতে বড় ধরনের ঝুঁকি ছিল এবং এতে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বেশিসংখ্যক ক্রেতা থেকে টাকা নিয়ে ব্যাপক ছাড়ে কমসংখ্যক ক্রেতাকে পণ্য সরবরাহ করে মানুষকে প্রলুব্ধ করার মাধ্যমে প্রতারণা করেছে এসব প্রতিষ্ঠান। এটি প্রচলিত আইনে অপরাধ। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের অপরাধের দায়িত্ব সরকার বা কোনো সংস্থা নেবে না।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থা নয়। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বিকাশে নীতিমালা এবং আন্তর্জাতিক সংযোগ সৃষ্টি করা মন্ত্রণালয়ের কাজ। কোনো ব্যবসা খাতের জন্যই আলাদা নিয়ন্ত্রণ কাঠামো নেই। দেশে কোম্পানি নিবন্ধন, পণ্য ও খাদ্যমান, ভোক্তা অধিকার, প্রতিযোগিতা এবং সুষ্ঠু লেনদেন নিশ্চিত করার জন্য আলাদা আলাদা সংস্থা কাজ করছে। এ ছাড়া শৃঙ্খলা নিশ্চিত করাসহ প্রচলিত অন্যান্য আইন বাস্তবায়নে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ। ক্রেতা বা ব্যবসায়ী যদি মনে করেন তাদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হচ্ছে, তাহলে এসব সংস্থার কাছে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। ফলে কোনো কোম্পানির দায়দায়িত্ব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিতে হবে, বিষয়টি তেমন নয়।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ একদিনে লাখ লাখ মানুষের কাছে পৌঁছায়নি। কয়েক বছর ধরে এসব প্রতিষ্ঠান প্রকাশ্যে ব্যাপক ছাড়ের বিজ্ঞাপন দিয়ে ব্যবসা করে আসছে। বিপুল খরচ করে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের স্পন্সর হিসেবে অংশ নিয়েছে ইভ্যালি। এখন যারা বলছে এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা পদ্ধতি টেকসই নয় বা প্রতারণামূলক পঞ্জি স্কিম পদ্ধতি, তাহলে দেশের কোনো কর্তৃপক্ষ শুরুতে কেন বন্ধ করেনি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিভিন্ন কারণে আজকের এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ডেসটিনি, যুবকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাৎ করলেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়নি। যে কারণে অন্যরাও একই ধরনের প্রতারণার উদ্যোগ নেওয়ার সাহস দেখিয়েছে। এ ছাড়া ই-কমার্স খাতে নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ নিতেও দেরি হয়েছে।

ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, ধামাকা, নিরাপদ ডটকমসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের দেশের কয়েক লাখ গ্রাহকের প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা আটকে পড়েছে। এর মধ্যে ইভ্যালির কাছে রয়েছে এক হাজার কোটি এবং ই-অরেঞ্জের কাছে ১১শ কোটি টাকা আটকে আছে। এসব গ্রাহকের মধ্যে যেমন আছেন ক্রেতা শ্রেণি, তেমনি রয়েছে বিভিন্ন পর্যায়ের সরবরাহকারী কোম্পানি। সরবরাহকারীরা বাকিতে পণ্য দিয়ে টাকা পায়নি। এ ছাড়া রয়েছেন এসব প্রতিষ্ঠানের মার্কেট প্লেস ব্যবহার করে পণ্য বিক্রি করা দেশের ছোট ও মাঝারি খাতের উদ্যোক্তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রথমত ই-কমার্সগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে বা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে না। ফলে এ খাতে কোথায় কী হচ্ছে, তা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মিত জানা থাকার কথা নয়। যখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সুনির্দিষ্ট তদন্ত করার অনুরোধ করেছে বা গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে, তখন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যতটা উদ্যোগ নেওয়ার সুযোগ আছে, তা নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এর আগে ডেসটিনি, যুবকের মতো ঘটনা এ দেশে ঘটেছে। এরপরও মানুষ সচেতন হয়নি। কিছু মানুষের আকাশচুম্বী লোভের সুযোগ নিচ্ছে কিছু সুযোগসন্ধানী ধুরন্ধর ব্যবসায়ী। মানুষ নিজের কাজে ঝুঁকি কতটা এ বিষয়ে সচেতন না হলে কোনো সংস্থাই এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে পারবে না।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এর আগে যুবক, ডেসটিনিসহ অন্যান্য প্রতারণামূলক ব্যবসার ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জের মতো প্রতিষ্ঠান সুযোগ নিয়েছে। এ ছাড়া ই-কমার্স খাতে নীতিমালা করা হলেও এর স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) করতে দেরি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে করোনা একটি কারণ। বর্তমানে যে নির্দেশিকা বা এসওপি করা হয়েছে, এটা আরও আগে করা হলে বর্তমান পরিস্থিতি হতো না। তবে দেরিতে নির্দেশিকা হলেও সামগ্রিক ই-কমার্সের জন্য তা ভালো হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ই-কমার্স দেশে বিকাশমান ব্যবসা পদ্ধতি। এ ব্যবসা বিকাশের সুবিধার্থে 'জাতীয় ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা-২০১৮' করা হয়েছে। সেখানে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কীভাবে ব্যবসা করবে, কোন ধরনের পণ্য ও সেবা বেচাকেনা করতে পারবে, লেনদেন ব্যবস্থা, নিরাপত্তা, বিতরণ ব্যবস্থাসহ সার্বিক বিষয় পরিস্কার করে বলা হয়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতার আচরণ বিধিও ওই নীতিমালায় রয়েছে। নীতিমালার আলোকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এক হাজার ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনও নিয়েছে। সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল কমার্স সেলের প্রধান হাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ই-কমার্স ব্যবসার প্রতারণা বন্ধে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বছর আগে থেকেই উদ্যোগ নিয়েছে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইভ্যালি ও তার স্বত্বাধিকারীর ব্যাংক হিসাবের তথ্য নেওয়া হয়। একই সঙ্গে দেশের সাতটি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়া হয় ওই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে। এরপর ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়। এ রকম পরিস্থিতি দেখে সংশ্নিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে একটি নির্দেশিকা তৈরি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়, যা এ বছর গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ই-কমার্স যাতে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়, ক্রেতা, বিক্রেতা ও সরবরাহকারী সব পক্ষের স্বার্থ যাতে ঠিক থাকে, সেজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে।

হাজার হাজার মানুষের অভিযোগ
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে হাজার হাজার মানুষ ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জের প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করার অভিযোগ নিয়ে গেছে। সংস্থাটি সব সময় অভিযোগ নিষ্পত্তি করাতেই মনোযোগ দিয়েছে। কিন্তু একই প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে বারবার মানুষ কেন অভিযোগ নিয়ে আসছে, কোম্পানিটি কেন একই অপরাধ বারবার করছে, সে বিষয়ে মনোযোগ দেয়নি। সরকারের কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে এসব কোম্পানি বিষয়ে অভিযোগও করেনি।

এ খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-ক্যাব কিছুদিন আগে যেসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সময়মতো পণ্য সরবরাহ না করা বা ফেরত না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, তাদের কয়েকটির সদস্য পদ বাতিল করেছে। কিন্তু আগে থেকে এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়নি বা সতর্কতা জারি করেনি।

এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের দেখভাল করা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজ নয়। তাদের লেনদেন আলাদাভাবে মনিটর করারও সুযোগ নেই। কারণ, প্রতিদিন লাখ লাখ লেনদেন হচ্ছে অনলাইনে। ব্যাংকগুলোকে বলা আছে, যে কোনো লেনদেন সন্দেহজনক হলে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে। কোনো ব্যাংকই কোনো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের লেনদেন সম্পর্কে সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য দেয়নি। কিন্তু ইভ্যালির তদন্ত করতে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক দেখেছে, সেখানে এমন কিছু লেনদেন হয়েছে, যে ক্ষেত্রে ব্যাংকের উচিত ছিল সন্দেহজনক লেনদেনের রিপোর্ট বা এসটিআর করা। কিন্তু পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হওয়ার পর ব্যাংকগুলো ঠিকই নিজেদের গ্রাহকদের লেনদেন না করার অনুরোধ করেছে।


 নিউজটি পড়া হয়েছে ৬২৬ বার  






 

জাতীয়

ঢাকাস্থ ভোলা জার্নালিস্টস ফোরামের সভাপতি রুমেন ও সাধারণ সম্পাদক পরশ

নির্বাচন ২০২৪!

নাজিরপুরে সাময়িক বরখাস্তকৃত এসি ল্যান্ডের বিরুদ্ধে অডিও ষড়যন্ত্রে জড়িত বদলি আরো দুইজন

বিশ্ব মশা দিবস, ডেঙ্গুর আক্রমণ ও মশা নিধনের নামে তামাশা!

প্রথমবারের মত অনুষ্ঠিত হলো 'ঢাকা ক্যাটেল এক্সপো-২০২৩'

ব্যাচভিত্তিক গ্রুপের নামে প্রতারণা, পলাতক রিগ্যান হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা

চা শ্রমিকদের আন্দোলন ও এই শিল্পের সঙ্কট!

বড় অসময়ে চলে গেলেন কেকে, মৃত্যু নিয়ে কিছু প্রশ্ন!

ই-কমার্স: গ্রাহকের টাকা ফেরত দেয়া নিয়ে জটিলতা

ক্যাশ সার্ভার স্থানান্তর নিয়ে জটিলতা, বিপাকে পড়বে ইন্টারনেট ব্যবহারকারিরা

জাতীয় বিভাগের আরো খবর





সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি:
আবদুল্লাহ আল হারুন
প্রধান সম্পাদক:
আসিফ হাসান (নূর নবী)

সম্পাদক ও প্রকাশক:
মো. জিয়াউল হক
বিশেষ সংবাদদাতা:
র‌বিউল ইসলাম সো‌হেল

আমাদের মানচিত্র

ঠিকানা: দেওয়ান কমপ্লেক্স (৩য় তলা), ৬০/ই/১, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়:
কক্ষ নং ১৪/সি, নোয়াখালি টাওয়ার (১৪ তলা), ৫৫-বি, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০

ফোন: ০১৯১৪-৭৩৫৮৫৮, ০১৯১৪-৮৭৫৬৪০
ইমেইল: info@amadermanchitra.news, amadermanchitrabd@gmail.com

Location Map
Copyright © 2012-2024
All rights reserved

design & developed by
corporate work